বিয়ের পর স্বামীর সাথে কুয়েতে প্রবাসী হন রাবেয়া খান। দুই সন্তানের জননী প্রায় ১৬ বছরেরও বেশী প্রবাসে জীবনযাপন করছেন। স্বামী সন্তান নিয়ে খুব সুন্দর ভাবে সংসার জীবন কাটলেও মনের ভেতরে তার সব সময় একটা স্বপ্ন ছিলো, নিজে কিছু করবেন। সেই চিন্তা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়া।
ছোট বেলা থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি, ঘর সাজানো আর অন্যকে নিজের রান্না করা খাবার খাওয়াতে ভালোবাসতেন রাবেয়া খান। খুব জলদি যেকোন ধরনের খাবার রান্না করতে পারতেন তিনি। রান্না শেখার চর্চাও ছিল সবসময়।
তিনি উদ্যোক্তাবার্তাকে জানান: প্রবাসে প্রতি সপ্তাহেই ফ্যামিলি পার্টি হয়, সেখানে বাংলাদেশী ভাবী বা বান্ধবীদের অনুরোধে মজার মজার খাবার রান্না করতাম। তারা আমার রান্নার খুব প্রশংসা করতেন তখনই ভাবনাটা এলো কেন আমি আমার শখটাকে উদ্যোগের পথে নিচ্ছি না। আমি তো রান্না করেই উদ্যোক্তা হতে পারি। সেই ভাবনা থেকেই উদ্যোক্তা হওয়া।
উদ্যোক্তা রাবেয়া খানের জন্ম খুলনাতে হলেও তিনি বেড়ে উঠেন ঢাকার ধানমন্ডিতে। লালমাটিয়া মহিলা কলেজ থেকে সমাজ কল্যাণে মাষ্টার্স করে চাকরিজীবি স্বামীর সাথে কুয়েতে প্রবাসী হন।
২০১৭ সালের মে ‘র দিকে ‘বাংলাদেশী ফুড’ নাম দিয়ে তিনি একটা ফেসবুক পেইজ খুললেও তখন অতোটা নিয়মিত ছিলেন না। করোনার ভেতরে নতুন করে সব শুরু করেন। তার উদ্যোগের নাম রাবেয়া’স কিচেন।
এই উদ্যোক্তা বলেন: কুয়েতে নারীদের র্কমসংস্হানের ব্যবস্হা খুব কম। হাতে গোনা কয়েকজন নারী বাইরে কাজ করেন। বেশিরভাগ উচ্চ শিক্ষিত নারীরা ঘরেই বসা। কিন্তু আমার মন সব সময় বলতো আমি কিছু করবো। নিজের শখ রান্না করা, সেই শখকেই পেশা হিসেবে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। খুব অল্প পুঁজি দিয়ে, ঘরে রান্না করেই আমি আমার উদ্যোগ শুরু করি।
তিনি জানান দেশী খাবার- ভাত, মাছ, বিভিন্ন র্ভতা, পোলাও, রোষ্ট, কাবাব, চাইনিজ ফুড, বিভিন্ন রকমের মিষ্টি, পিঠাপুলি, আচার আর সেই সাথে অ্যারাবিক বিভিন্ন খাবার নিজের ঘরে তৈরি করে হোম ডেলিভারি করে থাকেন।
“পারিবারিক যেকোন অনুষ্ঠানের জন্য আমি খাবারের অর্ডার নিয়ে থাকি। সে ক্ষেত্রে আমাকে এক দুই দিন আগে অর্ডার দিলেই আমি সব করে দেই। কখনও বড় পার্টির জন্য অর্ডার আসে, আবার কখনও সিঙ্গেল অর্ডারও আসে। অনেক প্রবাসী ভাই একা থাকেন, সেক্ষেত্রে তারা রান্নার সময় পাননা, তারাও বিভিন্ন খাবার অর্ডার করে থাকেন। আমি সব সময় খাবারের গুণগত মান ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে লক্ষ্য রাখি,” বলে জানান রাবেয়া খান।
স্বামী-সন্তানসহ প্রবাসীদের সমর্থন ও সহযোগিতা পাওয়া এই উদ্যোক্তা তরুণ উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে বলেন: যেটাই শুরু করেন না কেন, ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে হবে। এক দুই দিনে সফলতা আসে না। সফলতার জন্য ধৈর্য্য আর পরিশ্রম দুটোরই দরকার হয়।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ্যোক্তা রাবেয়া খান জানান, “আমি আমার হোম মেইড খাবারের গুণগত মান ধরে রাখতে চাই। আমার স্বপ্ন আমার হোম মেইড খাবারগুলো একটা বড় পর্যায়ে গিয়ে সাফল্য পাবে এবং অনলাইনে প্রতিষ্ঠিত ও বিশ্বস্ত হবে। আর সেই সঙ্গে আল্লাহ যদি চান, ইচ্ছা আছে নিজে একটা রেষ্টুরেন্ট দেবো । যেখানে এসে সবাই ঘরোয়া খাবারের স্বাদ পাবে।”
আফসানা অভি
উদ্যোক্তা বার্তা