কলেজ শিক্ষক লায়লা আঞ্জুমানের করোনাকালীন সময়ে যখন হঠাৎ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেল যে কোন প্রয়োজনে স্বামী বা পরিবারের বাকিদের কাছে টাকা চাইতে হতো।
বিষয়টি খুব খারাপ লাগছিল এবং মনে মনে মেনে নিতে পারছিলেন না। তার। এমন পরিস্থিতিতে ঘরে থাকতে থাকতে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। একটা পর্যায়ে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। এভাবে চলতে চলতে তিনি অনুভব করলেন কাজের মধ্যে থাকলে তিনি সুস্থ থাকবেন এবং নিজের প্রয়োজনে অন্যের কাছে হাত পাততে হবে না। এমন ভাবনা থেকে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। কিন্তু পুঁজি নেই। এক শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নিলেন।
এরপর ‘আঞ্জুম ক্লোসেট বাই ঝুম’ নামে সামাজিক যোগাযোগ পাতায় একটি পেজ চালু করেন এবং বাটিকের শাড়ি, থ্রিপিস নিয়ে কাজ শুরু করে।
উদ্যোক্তা বার্তাকে লায়লা আঞ্জুমান বলেন, ‘‘যখন উদ্যোগ গ্রহণ করলাম কাউকে পাশে পাইনি। বরং সবাই বিভিন্নভাবে কটাক্ষ করে বলেছে ‘ভাতের অভাবে আছো নাকি যে মেয়ে মানুষ হয়ে উদ্যোক্তা হলে’। তবে এমন বঞ্চনাকে প্রাধান্য দেইনি। এসব বঞ্চনাকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে চলেছি।’’
লায়লার এ সাহসিকতায় মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ২০ হাজারের পুঁজি আজ প্রায় চার লাখ টাকা। শাড়ি, থ্রিপিসের সাথে এখন যুক্ত হয়েছে গহনা। বাংলাদেশের সবকটি জেলায় লায়লা আঞ্জুমানের পণ্য পৌঁছে গেছে এবং যাচ্ছে। এছাড়াও সৌদি আরবে দুইবার তার পণ্য গেছে। পণ্যের মান বিচার করে এত কম সময়ে অসংখ্য ক্রেতা তার রিপিট কাস্টমার হয়েছে।
এই পুরো দায়িত্ব নিজের হাতেই সামলাচ্ছেন তিনি। একটি কারখানা গড়া এবং হাজার হাজার অসহায় মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়াই লায়লা আঞ্জুমানের ভবিষ্যত পরিকল্পনা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক লায়েস উদ্দিন এবং পারভীন বানু দম্পতির ঘরে জন্ম লায়লা আঞ্জুমানের। শৈশবের মিষ্টি সময় অতিবাহিত করেছেন নিজ গ্রামেই। কানসাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করে রাজশাহীতে গিয়ে নিউ গভঃমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। পরবর্তীতে রাজশাহী কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ২০০০ সাল থেকে পড়াশোনা এবং পরবর্তীতে বিয়ে হওয়ায় রাজশাহীতে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন লায়লা আঞ্জুমান। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেছিলেন তিনি। বর্তমানে বেলপুকুর আইডিয়াল ডিগ্রি কলেজে শিক্ষকতা করছেন লায়লা।
তরুণদের উদ্দেশ্যে লায়লা বলেন, ‘হাত পেতে অন্যের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নিজের প্রয়োজন মেটানোয় কোন সম্মান নেই। তাই যারা বেকার আছেন তারা কোন না কোন উদ্যোগ গ্রহণ করুন। নিজের উপার্জনে মাথা উঁচু করে বাঁচুন।’
মহিলাদের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য বেশি জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো মহিলারা অনেক পিছিয়ে। সকলে যদি স্বাবলম্বী হয় এই অবস্থার অবসান ঘটবে অচিরেই, যা আমাদের সকলের কাম্য।’
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা