বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের উদ্যোগে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি, ঢাকা এর প্রাঙ্গণে ০৮-১০ মার্চ, ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত ০৩ (তিন) দিন ব্যাপী ব্যাংকার-এসএমই নারী উদ্যোক্তা সমাবেশ ও পণ্য প্রদর্শনী মেলা-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান একাডেমি এর মিলনায়তনে ০৮ মার্চ, ২০১৯ তারিখ শুক্রবার আয়োজন করা হয়। মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম.পি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মাননীয় গভর্নর জনাব ফজলে কবির। এছাড়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জনাব এস, এম, মনিরুজ্জামান এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ মাহবুবুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই এন্ড প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জনাব শেখ মোঃ সেলিম উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জনাব মোঃ আবদুর রহিম। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীবৃন্দ, এসএমই প্রধান, সিএমএসএমই নারী উদ্যোক্তা, এসএমই এন্ড প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের উপ-মহাব্যবস্থাপকগণ, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট এর কর্মকর্তাবৃন্দসহ বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এসএমই এন্ড প্রোগ্রামস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগের ফলে কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ (সিএমএসএমই) খাতে নারীরা অধিক হারে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর বিশেষ অতিথি হিসেবে তাঁর বক্তব্যে নারী উদ্যোক্তা খাতের উন্নয়নে সিএমএসএমই ঋণের ভূমিকার বিষয়ে আলোকপাত করেন। সারাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের কাছে সরকারি ও বেসরকারি সকল স্টেকহোল্ডারদের সবধরনের কর্মসূচি ও সেবার তথ্য সঠিকভাবে পৌঁছানো জরুরি বলে তিনি মতামত প্রদান করেন। অন্যদিকে অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান জনাব সৈয়দ মাহবুবুর রহমান নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে সিএমএসএমই ঋণের পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তাগণের মধ্যে নেটওয়ার্কিং এর উপর গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধান অতিথি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এম. পি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের নারী সমাজের নিষ্ঠা, উদ্ভাবনী শক্তি ও শ্রম নিপুণতার কল্যাণে অর্থনীতির মূল স্রোতে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমশই বাড়ছে। তৈরি পোশাক খাতসহ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ, দারিদ্র্য দূরীকরণ, কর্মসংস্থান, দেশজ শিল্পায়ন বিকাশে এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিকাশে নারীরা যথেষ্ট অবদান রাখলেও প্রাতিষ্ঠানিক অর্থনৈতিক খাতে তাঁদের অংশগ্রহণ এখনো অপ্রতুল। পুঁজি ও শিক্ষার অভাব, সামাজিক ও পারিবারিক বাঁধা, পণ্য বাজারজাতকরণ ইত্যাদি সমস্যা দূরীভূত করা হলে এদেশে নারী শিল্পোদ্যোগ কাঙ্খিত মাত্রায় উন্নীত হবে। নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে সারাবিশ্বে বাংলাদেশ একটি রোল মডেল হিসেবে পরিচিত হবে মর্মে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর জনাব ফজলে কবির বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বিশেষ করে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের ভিশন ও মিশনে ‘ফাইন্যান্সিয়াল ইনক্লুশন’- কে একটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছি। আমাদের মূল লক্ষ্য হলো আমাদের অবহেলিত জনগোষ্ঠী যারা আর্থিক সুবিধা হতে বঞ্চিত তাদেরকে যত দ্রুত সম্ভব আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসা। সে লক্ষ্যে আমরা কটেজ, মাইক্রো, স্মল ও মিডিয়াম (সিএমএসএমই) খাতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করে এ খাতে অর্থায়ন কার্যক্রমকে জোরদার করেছি। এসডিজি’র এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়ে রয়েছে, কেননা অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নারী উদ্যোক্তাদের পরামর্শ সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়সহ সকল শাখা অফিসে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ইউনিট কাজ করছে মর্মে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক পরিচালিত পুনঃঅর্থায়নের তথ্য উপস্থাপন করে তিনি জানান যে, অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা অধিক হারে ঋণ পাচ্ছে। এই উদ্যোগ মূলত নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে সহায়তা করে আসছে। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ব্যাংকের উদ্যোগে প্রায় ২৪ জন নারী উদ্যোক্তাকে প্রায় ১০ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক জানব মোঃ আবদুর রহিম প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথিদের গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানান ও এই আয়োজনকে সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
সুরাইয়া আলম