স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ পেয়েছে।

জাতিসংঘের এ সংক্রান্ত পাঁচ দিনব্যাপী এক বৈঠক শেষে এ তথ্য জানানো হয়।

গত ২২-২৬ ফেব্রুয়ারি নিউইয়র্কে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে এলডিসি স্ট্যাটাস পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ, নেপাল ও লাওসকে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উত্তরণের সুপারিশ করা হয়।

পাঁচ দিনব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের সূচক পর্যালোচনা করা হয়। বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণে সব ধরনের সূচকের অগ্রগতি হয়েছে।

বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৮২৭ মার্কিন ডলার। তবে কোনো দেশ উন্নয়নশীল দেশ হতে হলে জাতিসংঘের মান অনুযায়ী মাথাপিছু আয় ১ হাজার ২৩০ মার্কিন ডলার হতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে আছে। অন্যদিকে, মানবসম্পদ সূচকেও এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। মানবসম্পদ সূচকে প্রয়োজন ৬৬ পয়েন্ট। আর বাংলাদেশের রয়েছে ৭৫ দশমিক ৩ পয়েন্ট। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। এসব অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে বাংলাদেশকে এলডিসি থেকে উত্তরণে চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ।

এলডিসি থেকে উত্তরণ আপামর জনসাধারণের কৃতিত্ব; বললেন প্রধানমন্ত্রী
বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ তথা এলডিসি তালিকা থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ করেছে জাতিসংঘ। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর প্রাক্কালে এই অর্জনকে আনন্দের ও গর্বের বলে আখ্যা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এই অর্জনের কৃতিত্ব তিনি দিয়েছেন আপামর জনসাধারণকে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের জন্য এ উত্তরণ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। এ কৃতিত্ব দেশের আপামর জনসাধারণের। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই মাইলফলক অর্জন করতে পেরেছি।

গতকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আজকের যে উন্নতি, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, তা আমাদের বিগত ১২ বছরের নিরলস পরিকল্পনা, পরিশ্রম এবং প্রচেষ্টার ফসল। দেশের মানুষই এসব করেছেন। আমরা সরকারে থেকে শুধু নীতি-সহায়তা দিয়ে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মাত্র সাড়ে তিন বছরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে টেনে তুলে স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে নিয়ে গিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে তারই হাতে গড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করলো।

এই অর্জনের জন্য বাংলাদেশের সব নাগরিক ও উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এই শুভ মুহূর্তে আমি দেশ ও দেশের বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশের সব নাগরিককে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আমাদের উন্নয়ন সহযোগীদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে, জনগণের একজন নগণ্য সেবক হিসেবে এই কৃতিত্ব অর্জনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমি নিজেকে ধন্য মনে করছি। মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি।

এলডিসি থেকে উত্তরণের এই অর্জনকে দেশের নতুন প্রজন্মকে উৎসর্গ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি এই অর্জনকে উৎসর্গ করছি আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মকে, যারা আজকের বাংলাদেশকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লক্ষ ৯২ হাজার গৃহহীনকে ঘর প্রদান করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরো ৫০ হাজার গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি খাতে চলতি বাজেটে ৯৫ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে যা বাজেটের ১৬ দশমিক আট-তিন শতাংশ এবং জিডিপির ৩ দশমিক শূন্য-এক শতাংশ। উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি ২৫ লাখ। প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ২ কোটি ৫৩ লাখ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি, উপবৃত্তি প্রদান করা হয়।

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হবে গৌরব ও সম্মানের
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের জন্য গৌরব ও সম্মানের। আর উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ জন্য দেশের বেসরকারি খাতে গবেষণা ও উন্নয়নের সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর আরো গুরুত্ব দিতে হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলার সফল বাস্তবায়ন। একই সঙ্গে এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছে তার স্বীকৃতি।

বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আলোচনা করতে হবে
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, উত্তরণ-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়া সাপেক্ষে বাংলাদেশকে এখন থেকেই প্রস্তুত হতে হবে। আর সে লক্ষ্যে এখন থেকেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে।

ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here