‘মেয়েরা এই কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারে’ শিরোনামে দেশের প্রথম বিউটিশিয়ান জেরিনা আজগরের একটি আর্টিক্যাল ছাপা হয়েছিলো বহুবছর আগে। সেই শিরোনামে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৭ সালে উদ্যোক্তা জীবনে আসেন মৌ বিউটি পার্লার অ্যান্ড স্কিন কেয়ার সেন্টারের স্বত্ত্বাধিকারী এবং রাজশাহীতে পার্লার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি রুকসানা হুদা। আজ বুধবার ১৫ জুন রাজশাহীর উপশহর এলাকার তিন নম্বর সেক্টরে তার প্রতিষ্ঠানে উৎসবমুখর পরিবেশে ২৫ বছর পূর্তি উদযাপন করা হয়। সেসময় উদ্যোক্তার নতুন-পুরাতন ক্লায়েন্ট, পরিবারের সদস্য এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাবার চাকরির সুবাদে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোটবেলা কেটেছে রুকসানা হুদার। মাধ্যমিক না পেরোতেই প্রবেশ করতে হয় সংসার জীবনে। শ্বশুরবাড়ি থেকেই মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক করেন তিনি। হঠাৎ একদিন পত্রিকায় চোখে পড়ে দেশের স্বনামধন্য বিউটিশিয়ান জেরিনা আজগরের একটি আর্টিক্যালে। সেটি পড়ে বিউটিফিকেশন কোর্স করার আগ্রহ জাগে রুকসানা হুদার। পরিবারের সহযোগিতায় ঢাকার একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোর্স করেন তিনি। কোর্স শেষে রাজশাহীতে ফিরে স্বামীর কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা নিয়ে রাজশাহীর উপশহরে নগরীর প্রথম শীতাতপনিয়ন্ত্রিত আধুনিক সরঞ্জামাদি দিয়ে সাজানো বিউটি পার্লার প্রতিষ্ঠা করেন এই উদ্যোক্তা। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে বিষয়টি দুঃসাহসিকতাই ছিলো বটে।
প্রতিষ্ঠানের রজতজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠানে উদ্যোক্তা রুকসানা হুদা উদ্যোক্তা বার্তাকে বলেন, “আজ আমার ভীষণ আনন্দের দিন। প্রতিষ্ঠানের জন্মলগ্নের ক্লায়েন্ট যেমন আজ এখানে উপস্থিত, তেমনি তাদের সাথে নতুনরাও। শুরুর লগ্নে যারা আসতেন, আজ তাদের অনেকের সাথে তাদের মেয়েরা পার্লারে আসেন, পুত্রবধূরা আসেন এবং অনেকের নাতনিও আজ আমার ক্লায়েন্ট। প্রতিষ্ঠানের পঁচিশ বছর পূর্তিতে সবাইকে একসাথে পেয়ে ভীষণ ভালো লাগছে। তারা পাশে ছিলেন বলেই ভালো-খারাপ মিশিয়ে পঁচিশটি বছর কেটে গেলো। আশা রাখছি তারা এবং তাদের পরিবার আগামী দিনেও এভাবে আমাদের পাশে থাকবেন।”
তিনি আরো বলেন: খুব ভালোভাবে শুরু করেছিলাম আমি, সকলের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছিলাম। ঈদে এতো ভিড় হতো যে পার্লারের জায়গাসহ নিজের ড্রয়িংরুমেও বসতে দিতে হতো, এমনকি বাইরে চেয়ার ভাড়া করে ক্লায়েন্টদের বসাতাম। এভাবে চলতে চলতে ২০০৬ সালে আমি আরো ভালো প্রশিক্ষণ নেওয়ার উদ্দেশ্য দেশের বাইরে যাই। হঠাৎ কল আসে পার্লারে আগুন লেগেছে। খবরটা পেয়েও দেশে ফিরতে ফিরতে সপ্তাহখানেক লেগে যায় আমার। ফিরে এসে দেখি পুরো পার্লার আগুনে ছাই হয়ে গেছে। প্রতিটি প্রোডাক্ট, সরঞ্জামাদি সব পুড়ে ছাই। বিরাট ধাক্কা এসে লাগলো আমার। কিন্তু থেমে থাকলাম না। এভাবেই ভালো-মন্দ মিশিয়ে আজ পঁচিশ বছরে আমার প্রতিষ্ঠান।”
ফেসিয়াল, পেডিকিওর, মেনিকিওর, পার্টিমেকআপ, ব্রাইডাল মেকআপ, হেয়ার ট্রিটমেন্টসহ সব ধরণের স্কিন কেয়ার সেবা দিয়ে থাকেন মৌ বিউটি পার্লার এন্ড স্কিন কেয়ার সেন্টার। এখানে যেমন বাইরে থেকে প্রোডাক্ট আনা হচ্ছে, আবার রুকসানা হুদা নিজেও প্যাক তৈরি করছেন। স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট তৈরি বিষয়ে এফডব্লিউসিএ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি।
সাধারণ গৃহবধূ থেকে উদ্যোক্তা জীবনের পঁচিশ বছরে বিরাট ভূমিকা রেখেছে উদ্যোক্তার পরিবার। মায়ের সাফল্য অর্জনে যেন কোন বাধা না আসে তাই সন্তানরা মাকে সাহস যুগিয়েছে সবসময়। দুইজন সহযোদ্ধা নিয়ে শুরু করেছিলেন পথচলা, আজ উদ্যোক্তা রুকসানা হুদার সাথে কাজ করছেন সাতজন।
নিজ উদ্যোগের পাশাপাশি আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের সাথে যুক্ত তিনি। রাজশাহীর বিউটি সেক্টরের উদ্যোক্তাদের নিয়ে সংগঠন ‘পার্লার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’ এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রুকসানা হুদা। এছাড়াও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে তার বিউটি পার্লারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছেন। এখানে অনেক নারী এসে কোর্স করছেন। বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত এবং এতিম নারীদের জন্য বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন এই উদ্যোক্তা। আগামীতে প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে তার। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেছেন বিউটি এন্ড ফ্যাশন অ্যাওয়ার্ড-২০২১।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা