ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অনার্স-মাস্টার্স, পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতে আরেকটি মাস্টার্সএবং ফটোগ্রাফিতে বেসিক কোর্সসহ ডিপ্লোমা। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণারত শামসুন্নাহার লাভলী।
এছাড়াও তিনি ফ্যাশন ডিজাইন, গান, কবিতা আবৃত্তি, ছবি আঁকা এগুলোতেও পারদর্শী। শখের বশে ক্রিয়েটিভ কাজগুলো করতেন, যা তাকে উদ্যোক্তা জীবনের দিকে নিয়ে গেছে। উদ্যোক্তা হবেন এমনটা কখনও ভাবেননি, অথবা উদ্যোক্তা হওয়ার কোন টার্গেট নিয়েও এগোননি, শখের বশে কাজ করতে করতে এগিয়ে গিয়েছেন।
বাবা ডক্টর আবদুস সাত্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পেইন্টার, ফলে বেড়ে ওঠা সৃজনশীল পরিবেশে। তিনি কখনও বাধা ধরা নিয়মে চলতে পছন্দ করতেন না, চাকরি জীবনের একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যেও নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে চাননি শামসুন্নাহার লাভলী।
গল্পের শুরুতে উদ্যোক্তা বার্তাকে জানান, “বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স শেষ করে বিয়ে হয়, এরপর সন্তান লালন পালন, ক্যারিয়ারের স্বপ্নটা তখন একেবারেই ধ্বংসপ্রাপ্ত। মাঝে মাঝে খুব হতাশ হতাম , বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে সেই ভাত রান্না করব আর সন্তান লালন পালন করব? এই যদি জীবন হয় তাহলে লেখা পড়ার কী দরকার ছিল? এমনটা ভাবতাম তাই বাবার উৎসাহে লেখালেখি শুরু করি। বাবা আমাকে বোঝাতে সক্ষম হন, চাকরি করলে সন্তানদের অবহেলা হবে। যদি ঘরে বসে লেখালেখি করি তাহলে বাচ্চাদের দেখার পাশাপাশি লেখালেখিতে ক্যারিয়ার গড়তে পারব। সেই থেকে লেখালেখি শুরু। “
এভাবে চলতে থাকে। তবে, লেখালেখির পাশাপাশি শাড়ি, থ্রি পিস ডিজাইন করে বছরে একবার এক্সিবিশন করতেন । দৃক গ্যালারিসহ চারুকলা আর্ট গ্যালারিতে এক্সিবিশন হয়েছে যেগুলো সবার প্রচুর প্রশংসা পেয়েছে। তবে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কাজ করতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন। মাইডাস এ নানুর দোকান ছিল, সেখান থেকে মুলত টাইডাই এবং ব্লক প্রিন্টের থ্রি পিস তিনি দোকানে দিতেন যেগুলো সাথে সাথেই বিক্রি হত।
বিয়ের পর ফ্যাশন ডিজাইনের কাজ কিছুদিন বন্ধ ছিল, বাচ্চারা বড় হওয়ার পর আবার শুরু করেন অনলাইন পেইজ ‘নীলাম্বরী’র মাধ্যমে যেটা বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ‘নীলাম্বরী’ খুব ছোট পরিসরে শুরু করেন চারজন কারিগর দিয়ে। দিনে দিনে ‘নীলাম্বরী’ সাফল্য পেতে শুরু করে এবং অনলাইনে প্রচুর বিক্রি হতে শুরু করে। ক্রমশ বেড়ে ওঠা নীলাম্বরী যেখানে চারজন ওয়ার্কার দিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছিল, এখন সেখানে ২০ জন কাজ করছেন। অনলাইনে ফেসবুক পেজ ‘নীলাম্বরী’ এখন একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। লাভলী এখন ভাবছেন বড় পরিসরে শোরুম নিয়ে কাজ করবেন।
শামসুন্নাহার লাভলী লেখালেখি এবং ফ্যাশন ডিজাইন নিয়েই ব্যস্ত থাকার পাশাপাশি দেশে-বিদেশে তার সাতটা একক ফটোগ্রফি এক্সিবিশন হয়েছে এবং দেশের বাইরে অসংখ্য গ্রুপ এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করেছেন।
এছাড়াও তার ১৪টি গবেষণাপত্র এবং দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে – ‘রবীন্দ্রনাথ এদেশের জল মাটিতে’ এবং ‘চলন বিলের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন’।
তিনি বলেন: জীবনের রং-রূপ ও রূপান্তর অনেকটাই দেখেছি, বুঝেছি যা সময়ের সাথে পাল্টেছে, একজন সাধারন লাইফ লার্নার হিসেবে আগা গোড়াই নিবেদিত ছিলাম, কোন ধন সম্পদ বা অর্থ বিত্ত নয় মনের আনন্দে কাজ করি।
নতুন উদ্যোক্তা হতে চাইলে তাদের প্রতি উপদেশ থাকবে, ‘আরাধ্য অর্জনগুলো সম্ভব করতে হলে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গী, মূল্যবোধ, আকাঙ্ক্ষা, স্বপ্ন এবং সর্বোপরি চ্যালেঞ্জ এবং নিজের কর্মক্ষমতা এক সুতোয় বেঁধে ফেলতে পারলে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না এবং একটা অর্থবহ কর্মজীবন তৈরি হবে। সফল উদ্যোক্তা হতে গেলে নেটওয়ার্কিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া সব সময়ই নিজেকে আপডেট রাখতে হয় এবং সব সময়েই পড়াশোনার মধ্যে থাকা প্রয়োজন, তাহলে ইনোভেটিভ ডিজাইন করতে পারবে যা সকলে পছন্দ করবে। মানুষ সবসময় নতুনত্বের স্বাদ পেতে চায় ।
তিনি মনে করেন কাজের সাথে সম্পৃক্ত সকলের সাথে একটা আবেগাশ্রিত ও সম্মান জনক সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজন। এই সম্পর্কগুলো ব্যবসাকে অনেক দূরে নিয়ে যায়।
মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা