পরিবারের মেজ সন্তান তাসনিয়া জহুরা। ইডেন কলেজ থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করে বর্তমানে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে ডিজাইন কো-অর্ডিনেশন অফিসার হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোটবেলা থেকেই মাকে দেখেছেন গৃহিণী হিসেবে পরিবারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। পাশাপাশি, নিজের একটা পরিচয় গড়ে তুলতেই ছোট বেলার উদ্যোক্তা জীবনের স্বপ্নকে বেছে নেন তাসনিয়া জহুরা।
বড় বোনের দেয়া ২৫০০ টাকা নিয়ে বন্ধু আঁখিকে সঙ্গী করে মোট ৫০০০ টাকা দিয়ে দুজন ৬ টা থ্রী পিস নিয়ে কাজ শুরু করেন। রাতারাতি অর্ডার আসতে শুরু করলো বিভিন্ন জায়গা থেকে। চাঁদপুর,নওগাঁ এবং বন্ধু মহল থেকে অর্ডার আসতে শুরু করে। তারপর ২০১৭ সালে তিনি তার উদ্যোগের নামে অনলাইনে একটি পেজ খোলেন। এছাড়াও ইন্স্টাগ্রাম, টুইটার, লিঙ্কডইনে তার পেইজ এবং আইডি আছে। এমনকি ইউটিউবেও একটি চ্যানেল আছে। তাসনিয়া তার উদ্যোগের নাম দেন Dirghou-ঊ। সেই থেকে তার উদ্যোক্তা জীবনের শুরু।
প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করার। যেহেতু তাসনিয়া কাপড় ভালো বুঝতে পারেন তাই কাপড় নিয়ে কাজ শুরু করেন। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, জামদানী, সিল্ক, কুর্তি, পাঞ্জাবি, থ্রী পিসসহ হোমডেকর নিয়ে কাজ করছেন তিনি। বর্তমানে তার একটা ব্লকের কারখানা রয়েছে। সেখানে দু’জন অভিজ্ঞ কর্মী দ্বারা থ্রিপিস, কুর্তি, শাড়িতে নিজস্ব ডিজাইনে ব্লকের কাজ করে থাকেন। ঠিক একই ভাবে শাড়িগুলো তাঁতিদের থেকে তৈরি করে এনে সেখানে ব্লকের ডিজাইন করা হয়। ব্লকের জন্য লোকাল কাঁচামালের পরিবর্তে সবচেয়ে ভালো কাচামাল ব্যবহার করেন শুধু গুণগত কোয়ালিটি নিশ্চিত করার জন্য। এতে তার খরচটা বেশি হলেও ক্রেতাদের বেশ প্রশংসা পাচ্ছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে উদ্যোক্তা তাসনিয়া বলেন জানান আমার বাবা বলেন, ‘তুমি যদি কাউকে ঠকিয়ে দাও তাহলে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে তার চেয়ে আরো দুইগুণ বেশি ঠকিয়ে দিবেন।’
এখন পর্যন্ত আলহামদুলিল্লাহ আমার পণ্যের কোনো নেগেটিভ রিভিউ পাইনি। যাঁরা একবার আমার পণ্য কিনেছেন তাঁরা বারবার অর্ডার করেছেন। এটাই আমার সবচেয়ে বড় অর্জন আলহামদুলিল্লাহ।
শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও পণ্য পাঠিয়েছেন উদ্যোক্তা তাসনিয়া। আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুবান্ধবের মাধ্যমে কানাডা, জার্মানি, এবং চায়না ফেয়ারে তিনি পণ্য পাঠিয়েছেন। এছাড়াও দেশের ভিতরে বাংলাদেশের প্রায় সব প্রান্তেই পণ্য পাঠিয়ে থাকেন উদ্যোক্তা।
যেহেতু নিজের কারখানা তাই, একবারে বেশি পণ্য উৎপাদন করেন না তিনি। ক্রেতার চাহিদার উপর ভিত্তি করে পণ্য উৎপাদন করে থাকেন তবে উৎসবের সময় কাপড়ের চাহিদা বেশি থাকায় উৎপাদনও বেশি হয় বলে তিনি জানান। গত ৪/৫ বছরে তিনি অনেকগুলো মেলায় অংশ নিয়েছেন এর মধ্যে এসএমই মেলা, বি’ইয়ার মেলা, ওয়েন্ডের মেলা এবং দেশজ ক্রাফটস এর ৩ টা মেলায় তিনি অংশ নেন। এছাড়াও ২০১৮ এবং ২০১৯ সালে চায়না ফেয়ারে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মেলার জন্য পণ্য পাঠান তিনি।
ভবিষৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আমি চাই Dirghou-ঊ এর মাধ্যমে বাংলাদেশী কাপড়কে বিশ্বের কাছে পৌঁছে দিতে। এবং বাংলাদেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে।” প্রচন্ড ধৈর্য না থাকলে উদ্যোক্তা হওয়া যায় না। এছাড়াও প্রয়োজন আগে পণ্য সম্পর্কে ভালো জ্ঞান অর্জন করা। পণ্য সম্পর্কে ভালো জ্ঞান উদ্যোক্তা জীবনকে সহজ করে দেয় এমনটাই মনে করেন উদ্যোক্তা তাসনিয়া জহুরা।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা