উচ্চ মাধ্যমিকের পর আর পড়াশুনাও করতে পারেননি সোহাগ ইসলাম। গুলশানের একটি রেস্টুরেন্টে জব করেছেন দেড় বছর। তারপর চাকরিহারা ছিলেন দীর্ঘদিন। সবাই চাকরি দেবে বলে কথা দিয়েছে কিন্তু কেউ কথা রাখেনি। সেই জেদ ধরেই নিজে সাবলম্বী হয়ে পরিবারকে আর্থিক সহায়তা করতে চেয়েছেন।
এরপর এক বড় ভাইয়ের সাথে হাস্তশিল্পের ব্যবসার জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু বয়সে ছোট বলে তার মতামত গুরুত্ব পেত না। তাই সেখান থেকে নিজের অংশ নিয়ে চলে আসেন। চিন্তা করেন নিজে একাই ব্যবসা শুরু করবেন। কিন্তু সমস্যা তার কাছে এতো পুঁজি নেই। কোনো রকমে ২০ হাজার টাকা জোগাড় করলেন। তাই দিয়ে শুধু করেন,ক এখন পর্যন্ত সেল ৩ লাখ টাকা।
উদ্যোগ শুরু করেন ২০২১ সালের জুন মাস থেকে। সব ধরনের দেশীয় শাড়ি ও পাঞ্জাবি নিয়ে। যদিও প্রথমে শুধু করেন খাদি পাঞ্জাবি দিয়ে, মোটামুটি ভাল চলছিল তারপর নিয়ে আসেন বেডশীট ওটাও ভালই চলছিল। তারপর ক্রেতার চাহিদা মাথায় রেখে সংযোজন করেন দেশিয় শাড়ি। গতানুগতিক ফটোগ্রাফি থেকে একজন ছেলে হয়ে ভিন্ন ধর্মী ফটোগ্রাফি করায় উই নামক একটি অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে পরিচিতি পান। তারপর পুরো দমে শাড়ি নিয়েই তার উদ্যোগ। সকল চিন্তা ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু এখন শাড়ি। তার ফটোগ্রাফি দেখে পন্য কিনে কেউ কখনো বলেনি পন্য দেখেছি এক হাতে পেয়েছি আরেক। এখানেই আমার আসল সফলতা।
ভাবনা ছিল একটা শপ খুলবো কিন্তু পুঁজি ছিল না। তাই বাসা থেকেই তার সকল কাজ একাই পরিচালনা করেন। প্রথমে ফটোগ্রাফিতে তার এক বড় ভাইয়ের সাহায্য নেন পরবর্তীতে ফটোগ্রাফিটাও একাই রপ্ত করেন। তার পেইজের নাম ‘Amicus Attire’। Amicus একটি ল্যাটিন শব্দ ।
বিভিন্ন মাধ্যমে কয়েকবার তার পণ্য দেশের বাহিরে গিয়েছে। যেমন কেউ বিদেশ থেকে অর্ডার করেছে তারপর ওই ক্রেতার আত্মীয়র মাধ্যমে বিদেশে পৌঁছানো হয়েছে। দেশের প্রতি জায়গা থেকেই তিনি অর্ডার পেয়েছি। বর্তমানে প্রতিমাসে প্রায় ৫০-৬০ পিস শাড়ি খুচরা বিক্রি হয়। টাকায় অংকে ৫৫-৭০ হাজার টাকা। দেশিয় শাড়ি আমাদের দেশের ঐতিহ্য হলেও বিদেশি শাড়ির প্রতি এখন সকলের আর্কষণ। সেই জায়গা ও কাস্টমারের চাহিদা অনুযায়ী শাড়ি নিয়ে কাজ করছেন।
উদ্যোক্তা সোহাগ ইসলাম গ্রামের বাড়ি ইলিশের রাজধানী চাঁদপুর, বেড়ে উঠা ওখানেই। বাবা কৃষিকাজ করেন, মা বেঁচে নেই। ৫ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। চির্কা চাঁদপুর বহুমুখী উচ্চা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও পুরান বাজার ডিগ্রী কলেজ, চাঁদপুর থেকে উচ্চা মাধ্যমিক পাশ করেন।
সাইদ হাফিজ,
উদ্যোক্তা বার্তা