মাত্র আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ২০১৬ সালে অন্বেষা তার উদ্যোগ ‘ত্রিনিত্রি’র যাত্রা শুরু করেন। বাংলাদেশে তখনও কাঠের গয়না বেশি প্রচলিত ছিল না। কাঠ দিয়ে যে আংটি, গয়না এমনকি টিপও হয়- এমন ধারণা অনেকটা অজানাই ছিল। প্রথমে কাগজের কিছু ক্রাফট, হাতে বোনা পুঁতির মালা দিয়ে শুরু করেছিলেন। তারপর আস্তে আস্তে কাপড়ে হ্যান্ডপেইন্টসহ ভিন্ন ধরনের গয়না দিয়ে ‘ত্রিনিত্রি’র পসরা সাজিয়েছেন।
অন্বেষার কাজগুলো সবাই খুব পছন্দ করতে শুরু করলেন। অনেকে গুগল বা পিন্টারেস্ট থেকে অনেক কিছুর ডিজাইন দিয়ে গয়না বানিয়ে দিতে বলতেন। ছোটবেলা থেকেই আর্টস এন্ড ক্রাফটসের প্রতি ঝোঁক ছিল অন্বেষার। পরিবারের তেমন সমর্থন না থাকায় চারুকলায় পড়া হয়নি, কিন্তু শখের বশে টুকটাক আঁকা-আঁকি আর ছোটখাট হোম ডেকর এবং কাঠের গহনা তৈরি করতেন তিনি। সবার অনুপ্রেরণা পেয়েই অন্বেষার ‘ত্রিনিত্রি’।
চট্টগ্রামের মেয়ে অন্বেষা দত্ত। বাবা সড়ক ও জনপথ বিভাগে কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে অবসরে৷ বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে তার শৈশব কেটেছে নানা জেলায়। পড়াশোনাও হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে৷ পরবর্তীতে চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স করেন। পড়াশোনা শেষ করে, গৎবাঁধা চাকরির পেছনে ছুটেননি অন্বেষা দত্ত। তিনি ছুটেছেন তার স্বপ্নের পথে।
‘ত্রিনিত্রি’ এখন কাজ করছে প্রধানত কাঠের গয়না নিয়ে। কাঠের সাথে মেটালের ফিউশন করেও গয়না বানানো হয়। সাথে আছে হোম ডেকরের নানা আইটেম। কাঠের গয়নায় ইচ্ছেমতো নকশায় নিজের ইমাজিনেশনকে তুলে আনা যায়, অনেক থিমে কাজ করা যায়। কাঠের তৈরি গহনা পরাও খুব সহজ আর বহনযোগ্য। তাই কাঠকে কাজের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন তিনি। অন্বেষা এবং তার চট্টগ্রামের বন্ধু সেঁজুতি মিলেই মোটামুটি সব কাজ করে থাকেন। তারা মূলত চাহিদা অনুযায়ী প্রোডাক্ট তৈরি করেন। কারণ সবগুলো প্রোডাক্ট তৈরি খুবই সময়সাপেক্ষ। প্রতিমাসে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি হয় ‘ত্রিনিত্রি’ থেকে।
অন্বেষা তার প্রতিবন্ধকতা প্রসঙ্গে বলেন,”আমার উদ্যোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা যেটা আমি ফেস করেছি সেটা হচ্ছে হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করা। এদেশে এখন কাঠের গয়না খুবই সহজলভ্য হয়ে গেছে। কোয়ালিটির বিষয়টি খেয়াল না রেখে অনেকেই যা পারে তা হুবহু কপি করে ফেলে। এক্ষেত্রে ক্রেতারাও বিভ্রান্ত হন। দামের ক্ষেত্রেও কোয়ালিটি ঠিক রাখতে গেলে একটু বেশি দাম পড়ে যায়। অন্যদিকে কোয়ালিটি খারাপ দিয়ে যে কপিটা হয় সেটা ক্রেতারা কিনে আল্টিমেটলি ঠকেন।”
তিনি বলেন: আমার উদ্যোক্তা জীবন নিয়ে আমি খুবই সন্তুষ্ট। চাকরি করিনি এটা নিয়ে আমার কোন আক্ষেপ নেই। উদ্যোক্তা জীবনে অনেক কিছু শিখেছি, প্রতিনিয়ত অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ করি, নিজের সাথে নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। প্রতিদিন নতুন নতুন ডিজাইন নিয়ে কাজ করতে, নতুন কিছু বানাতে খুব ভাল লাগে। আমার ইচ্ছা আছে সামনে কিছু কর্মী নিয়োগ দেয়ার। কারো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান মনে করবো। উদ্যোগ নিয়ে একটাই পরিকল্পনা ‘ত্রিনিত্রি’র নিজস্ব একটা শোরুম হবে। দেশে বিদেশে ‘ত্রিনিত্রি’কে সবাই কাঠের গয়নার জন্য একনামে চিনবে।
বর্তমানে অন্বেষা ঢাকার বাসাবো থেকে তার উদ্যোগ ‘ত্রিনিত্রি’ পরিচালনা করছেন। বিভিন্ন মেলায় তিনি তার উদ্যোগ নিয়ে হাজির হন৷
উদ্যোক্তা জীবনকে বেশ উপভোগ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একজন উদ্যোক্তা হিসেবে অন্য উদ্যোক্তাকে সম্মান করা খুব জরুরি বলে আমি মনে করি। সবাই সবার পাশে থাকলে অচিরেই বাংলাদেশে উদ্যোক্তাদের নিয়ে অনেক শক্তিশালী একটা কমিউনিটি গড়ে উঠবে। আর আমার মতো অনেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের স্বপ্নটাকে একটু একটু করে উদ্যোগে রূপ দিতে পারবে।”
সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা