স্থানীয় পর্যায়ে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার টেকসই উৎপাদনের চূড়ান্ত নিদর্শন৷ উগান্ডার এক শিল্পী কলা গাছের তন্তু দিয়ে আসবাব তৈরি করে সেই পথই বেছে নিয়েছেন৷ আরো মানুষকে সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণের প্রেরণা জোগাচ্ছেন তিনি৷
উগান্ডাকে আফ্রিকার কলার রাজধানী বলা হয়৷ ৫০টিরও বেশি জাতের পাকা কলা ও কাঁচকলা সে দেশে চাষ করা হয়৷ কলা শুধু মিষ্টি এক ফল, এমনটা ভাবা যেতেই পারে৷ কিন্তু উগান্ডার মানুষের কাছে কলার গুরুত্ব অনেক বেশি৷
সেখানকার শিল্পী আইজ্যাক নকোংগে কলাগাছ দিয়ে আসবাব তৈরি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা সত্যি অনবদ্য৷ বেশিরভাগ বাসার ভেতরের অংশ কারখানায় তৈরি কৃত্রিম উপাদান দিয়ে সাজানো৷ আমি স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি কিছু জিনিস চেয়েছিলাম৷ আমি চাই মানুষ এই আইডিয়া নকল করুক, কারণ এমনটাই হওয়া উচিত৷ আফ্রিকান হিসেবে আমাদের সেই পথেই এগোনো উচিত৷”
উগান্ডাকে আফ্রিকার কলার রাজধানী বলা হয়৷ ৫০টিরও বেশি জাতের পাকা কলা ও কাঁচকলা সে দেশে চাষ করা হয়৷ নানা রূপে সেই কলা প্রতিদিন খাওয়াও হয়৷ অন্য কোনো দেশের মানুষ উগান্ডানদের মতো এত কলা খায় না৷
কলাগাছের ডালে মাত্র একবারই ফল ধরে৷ তাই নতুন ফল গজানোর জন্য সেটি কেটে ফেলা জরুরি৷ সে কারণে ফসল তোলার পর গাছের বেশিরভাগ অংশ কেটে ফেলা হয়৷ কিন্তু বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেবার বদলে আইজ্যাক সেগুলি নতুন করে ব্যবহার করেন৷ কলাগাছ দিয়ে তৈরি তাঁর আসবাবের ভিত্তি প্রাকৃতিক তন্তু৷ আইজ্যাক নকোংগে বলেন, ‘‘আমাদের এখানে চারিদিকে কলার তন্তু ছড়িয়ে রয়েছে, পেঁপে ও ডাঁটাও পাওয়া যায়৷ আমাদের স্থানীয় উপাদান ব্যবহারের প্রণালী গ্রহণ করতে হবে৷ কোনো রাসায়নিক না থাকায় সেগুলি পরিবেশবান্ধবও বটে৷ কয়েক বছরের মধ্যে রাসায়নিক আমাদের জগত ধ্বংস করে দেবে৷ কিন্তু আমরা স্থানীয় উপাদান ব্যবহার করলে অবশ্যই আমাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে৷”
আইজ্যাক হাতে করে বাইরের অংশ থেকে তন্তু বার করেন৷ শীষগুলি চিকন করে কেটে তিনি রোদে শুকিয়ে তারপর প্রক্রিয়াজাত করেন৷ দক্ষতার সঙ্গে ফাইবার পাকালে দীর্ঘ দড়ি তৈরি করা যায়৷ পরে কাঠ বা ধাতুর ফ্রেমে সেই দড়ি বোনা হয়৷ আইজ্যাক বলেন, ‘‘আমার কম্পিউটার, আমার টেলিভিশন, উফার, ফ্লাস্ক – সবই দেখেছেন৷ আমার এমন দেওয়ালে ঝোলানো সাজানোর বস্তুও রয়েছে৷ পাঁচটিরও বেশি আছে৷”
সাজানোর জিনিস ও সংসারের প্রয়োজনীয় অনেক কিছুর উপাদান হিসেবে কলাগাছের তন্তু বেশ উপযোগী৷ আইজ্যাক নিত্যনতুন সামগ্রী তৈরি করে চলেছেন৷ সত্যিকারের শক্ত চেয়ারের মতো আরও বড় আসবাব তৈরি করতে প্রায় ১,০০০ মিটার তন্তু লাগে৷ প্রায় একশোটি কলাগাছ থেকে এত পরিমাণ তন্তু সংগ্রহ করা যায়৷ আইজ্যাক অন্য মানুষকেও এই বিপুল সম্পদ সম্পর্কে শিক্ষা দিতে চান৷ তিনি বলেন, ‘‘আফ্রিকায় আমরা অঢেল সম্পদে বিশ্বাস করি৷ যেমন এই ডাল কলার কাঁদিতে ভরা৷ চাষি কলাগাছ পোঁতার কিছুকাল পর ফসল তুলে কিছু আয় করবেন৷ অর্থাৎ আমরা সেই অঢেলতা ও ভালো ফসলে বিশ্বাস করি৷ সে কারণে এখানে একটা পাখি রয়েছে৷ পাখিও কলা খেয়ে বাঁচছে৷”
আইজ্যাকের শিল্পকলা দেখে কলা সম্পর্কে উগান্ডার মানুষের ধারণা কতটা বদলায়, সেটা দেখতে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷ কলা গাছের তন্তু দিয়ে হাতে তৈরি তাঁর আসবাব বাসায় আফ্রিকার সংস্কৃতি ও সৌন্দর্যের ছোঁয়া আনে৷ সেই আসবাব প্রকৃত অর্থে টেকসইও বটে৷
তথ্য সূত্র: ডয়েচে ভেলে