নানাবাড়ি রাজশাহীর মোহনগঞ্জে জন্ম আব্দুল লতিফ প্রামাণিক এবং রেহেনা বেগম দম্পতির কন্যা লায়লা নাজনীন সুইটির। পরবর্তীতে বাবার চাকরির সুবাদে রাজশাহী শহরে চলে যান এবং স্থানীয় সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পিএন গার্লস হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক ও নিউ গভমেন্ট ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ ফাইভ অর্জন করেন। এরপর বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অফ ইন্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি থেকে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিংয়ে গ্রাজ্যুয়েশন শেষ করেন।
পড়াশোনা চলাকালীন থেকেই তিনি ভাবতেন ‘আমি শিক্ষার যথার্থ মূল্য দেব। আমার মাধ্যমে যেন আরো কিছু মানুষের উপকার হয় সেদিকে প্রথম এবং প্রধান প্রাধান্য থাকবে আমার’
সেই চিন্তা থেকে নিজের জমানো ৫০০ টাকা নিয়ে কাজ শুরু করলেন নাজনীন গ্যালারির। সেখানে বিভিন্ন ভাগে তার কাজ গুছিয়ে রাখলেন পোষাক, গহনা এবং আয়ুর্বেদিক। নাজনীন গ্যালারির গুরুত্বপূর্ণ শাখা ‘নাজনিন আয়ুর্বেদিক’। সেখানে তিনি নিজেই প্রথম দিকে সবটা সামলাতেন। শুরুতে দু-একটি পণ্য তৈরি করতেন। বর্তমানে তিনি হোমমেড উপটান, গোলাপজল হেয়ার প্যাকসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন।
নাজনীন সুইটি বলেন, আমার পরিবার প্রথম দিকে আমার উদ্যোগ মানছিল না। তারা সবসময়ই চাইত আমি চাকরি করি। মেয়ে ব্যবসায়ী হবে বা উদ্যোক্তা হবে এটি মানতে তারা কিছুতেই রাজি ছিল না। আশপাশের মানুষও কথা শুনিয়েছে, কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারিং পড়লে কি উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হওয়ার জন্য? তোমার বাবা সরকারি চাকরি করতেন, পরিবারের সকলে চাকরি করে আর তুমি কিনা ব্যবসায়ী মেয়ে হবে! এমন অনেক কথা সবসময় শুনতে হত সুইটিকে।
তিনি স্বাধীনচেতা মানুষ হওয়ায় কখনই গুরুত্ব দেননি এসব কথার দিকে। আর দশটা মানুষ যখন সাধারণভাবে চিন্তা করে যে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করে বাবা মায়ের মুখ উজ্জ্বল করবে, পরিবারকে স্বচ্ছল রাখবে, সেখানে সুইটি চিন্তা করেছিলেন- ‘শুধু পরিবার নয়, সমাজ এবং পুরো দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল করতে বাংলাদেশকে। যা চাকরি করলে সম্ভব হবে না। তবে আমার উদ্যোগের মাধ্যমে অনেককে কাজ দিতে পারব’।
তাই পেশা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সুইটি নিজের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দিয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমানে তিনি ১২ জন কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে পেরেছেন।
মেয়ের এমন ভালো কর্মকাণ্ড দেখে আজ বাবা-মা সুইটিকে নিয়ে গর্বিত এবং সহযোগিতা করেন সবসময়। নাজনীন সুইটি বলেন, ভবিষ্যতে আমি হাজার হাজার নারীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করব এটিই আমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
তিনি রাজশাহী অঞ্চলে নারীদের জন্য ‘রাজশাহী বিউটিজ’ নামে একটি ফেসবুক পেজ ওপেন করেছেন যেখানে ১০ হাজারের বেশি মেয়ে যুক্ত আছে এবং সেখান থেকে প্রায় ৫০/৬০ জন মেয়ে ইতোমধ্যে নাজনীন সুইটিকে দেখে ছোট এবং বড় পরিসরে কাজ শুরু করেছেন।
৫০০ টাকা পুঁজিকে কয়েক বছরের ব্যবধানে ৫ লাখে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। অনলাইনে নাজনীন গ্যালারি, নাজনীন আয়ুর্বেদিক নামে পেজ রয়েছে। যা সততার সঙ্গে কাজ করায় খুব অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তরুণদের উদ্দেশ্যে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘শুধু নিজের এবং পরিবারের কথা চিন্তা করার পাশাপাশি আমরা যদি দেশের জন্যও চিন্তা করি, চাকরি না পেলে কোন উদ্যোগ গ্রহণ করি বা সময় নষ্ট না করে কোন উদ্যোগের পেছনে সময় দেই, তাহলে আমাদের দেশ খুব তাড়াতাড়ি উন্নত হবে এবং আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে তা আরো সহজ হবে। সবাই উদ্যোগ গ্রহণ কর, নিজে স্বচ্ছল হও, পরিবারকে স্বচ্ছল কর, দেশকে স্বচ্চল কর।
তামান্না ইমাম
রাজশাহী ডেস্ক, উদ্যোক্তা বার্তা