এ মৌসুমে ১৫টি আম বাগান এবং পাঁচটি লিচু বাগান থেকে প্রায় ১,০০০ মণ আম ও পাঁচ লাখ লিচু উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন ‘ফলশাহী’র স্বত্বাধিকারী মোঃ সাদ্দাম হোসেন। আম-লিচু ছাড়াও ২৫ থেকে ৩০ ধরনের ফল হয় ‘ফলশাহী’তে। রাজশাহীর প্রাণকেন্দ্র ভদ্রা রেলক্রসিং-এর পাশে উদ্যোক্তা সাদ্দাম হোসেনের ফলের রাজ্য। শুধু রাজশাহী নগরী নয়, সারাদেশে ‘ফলশাহী’র ফল সরবরাহ করেন উদ্যোক্তা সাদ্দাম।
আম, লিচু, তরমুজের মতো দেশি মৌসুমি ফল কিংবা আপেল, মাল্টা, আঙুর, চেরির মতো পরিচিত বিদেশি ফলের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী দেশ থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার ফল রামবুটান, পার্সিমন, অ্যাভোকাডো, কিউই, লংগান, ব্যানানা ম্যাংগো, চেরি ম্যাংগো, থাই ড্রাগন, মিষ্টি তেঁতুলের মতো ফলও হচ্ছে ‘ফলশাহী’তে।
নর্দান ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ এবং রাজশাহী ইউনিভার্সিটি থেকে (ব্যাংকিং এন্ড ইন্সুরেন্সে) ইভিনিং এমবিএ করেছেন এই উদ্যোক্তা। বিবিএ’র প্রথম বছর ২০১১ সালে হাতখরচের ৪,৩০০ টাকা জমিয়ে দুই হাজার লিচু কিনে তা বিক্রির মাধ্যমে উদ্যোক্তা জীবনে পদার্পণ করেছিলেন সাদ্দাম হোসেন। তবে পরিবার শুরুতে একেবারেই খুশি হতে পারেনি সাদ্দাম হোসেনের সিদ্ধান্তে। আর পাঁচজন মা-বাবার মতো তাদেরও স্বপ্ন ছিলো ছেলে লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকরি করবে। কিন্তু ছেলের স্বপ্ন ছিলো “আমার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান থাকবে।”
শেষ পর্যন্ত ছেলের ইচ্ছা মেনে নেয় পরিবার, চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন সাদ্দাম।
২০১১ সালে যাত্রা শুরুর পর উদ্যম গতিতে চলছিলো ‘ফলশাহী’। কিন্তু ২০২০-এ করোনা মহামারী শুরু হলে থমকে যায় ‘ফলশাহী’র কার্যক্রম। উদ্যোক্তা তখন ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। ঘরবন্দী জীবন কাটানোর সময় হাতে স্মার্টফোন থাকায় লক্ষ্য করতে থাকেন অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তখন তিনি ভাবলেন, ‘আমার যেহেতু প্রতিষ্ঠান আছে সেটাকেই আমি অনলাইনের আওতায় নিয়ে আসি।’
তখন থেকেই উদ্যোক্তা সাদ্দাম সামাজিক পাতায় তার ‘ফলশাহী’ পেইজে বিভিন্ন ধরনের দেশি-বিদেশি ফলের আদ্যোপান্ত এবং লাইভে এসে বিভিন্ন প্রজেক্টের আপডেট দিতে থাকেন। এভাবে খুব দ্রুত সারাদেশে ‘ফলশাহী’ পরিচিত হয়ে উঠে, জনপ্রিয়তাও পায়। শুধু রাজশাহী নয়, আম-লিচুর মৌসুমে দেশব্যাপী ফল সরবরাহ করেন এই উদ্যোক্তা।
আজ সাদ্দাম হোসেনের কর্মভূবনে স্থায়ী সাতজন এবং দেশীয় ফলের মৌসুমে অস্থায়ী আরো ১৫ থেকে ২০ জন সহযোদ্ধা কাজ করেন। ছেলের সাফল্য দেখে পিতা-মাতাও আজ গর্বিত।
আগামীতে বৃহৎ পরিসরে ‘ফলশাহী’ এগ্রো প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছেন আমের নগরীর স্বপ্নবাজ তরুণ মোঃ সাদ্দাম হোসেন।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা,রাজশাহী