বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পর, সবাই যখন বাস্তবতার পিছনে ছুটে চাকরির পড়াশোনার জন্য নিজেকে তৈরী করছে তখন আমার চিন্তা ভাবনা ছিল একটু ভিন্ন রকম।
কথা হচ্ছিলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা কানিজ এর সাথে। বাবার চাকরির সুবাদে সব সময় একটি চলমান জীবন পার করলেও এখন ঢাকা নারায়ণগঞ্জ নিবাসী। ছোট থেকেই স্বাধীনভাবে থাকতে পছন্দ করেন কানিজ। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষের দিকে সকলে যখন কোচিং প্রাইভেট এর চিন্তায় মগ্ন থাকত তখন কানিজ এরচিন্তা ছিল ভিন্ন রকম কিছু শুরু করার।
ছোট থেকেই মায়ের শাড়ি গুলোর উপরে কানিজ এর বেশ নজর থাকতো। সবসময় নতুন নতুন শাড়ি পরতে ভালোবাসতেন কানিজ। নরম সুতি শাড়ি কানিজ এর পছন্দের তালিকায় সবসময়ই প্রথমের দিকে। নিজের জন্য একটি মস্ত বড় শাড়ির ফ্যাক্টরি তৈরি করার প্রবল ইচ্ছা থেকে কানিজ তাঁর ‘সহজিয়া-Shohojiaa’ র যাত্রা শুরু করেন। শাড়ির প্রতি দুর্বলতাকে নিজের শক্তি হিসেবে কাজে লাগিয়ে খুব অল্প কিছু টাকা দিয়ে টাঙ্গাইল থেকে শাড়ি নিয়ে এসেছিলেন উদ্যোক্তা, এই শাড়ির মাধ্যমে কানিজ তাঁর সহজিয়ার পদযাত্রা আরম্ভ করেন।
সহজিয়ার ফ্যাক্টরি রাজশাহীতে, পড়াশুনা শেষ করে রাজশাহীতে ফ্যাক্টরি খোলেন। সেখান থেকেই সহজিয়ার কার্যক্রম শুরু করেন। উদ্যোক্তা মাত্র ৫০০০ টাকা দিয়ে তাঁর উদ্যোক্তা জীবন শুরু করেন। পরিবারের বাবা-মা থেকে ভাই-বোন, বন্ধু ও শুভাকাঙ্খী সকলেই উদ্যোক্তাকে পূর্ণ সহযোগিতা করেছিল।
সহজিয়া নিয়ে উদ্যোক্তা বলেন -“নিজের ভালোবাসা নিয়ে কাজ শুরু করেছি বলেই হয়তো ভবিষ্যতে নিজের জন্য একটি ভালো জায়গা তৈরি করতে পারবো বলে বিশ্বাস করি। সহজিয়াতে করা ড্রেস, শাড়ি, পাঞ্জাবি, হ্যান্ড মেড জুয়েলারি এবং তাঁতের শাড়ি যার সব কিছুই কানিজের নিজস্ব ডিজাইন করা, যেগুলোর সবগুলোই দেশীয় ঘরানার”।
সহজিয়া-র কাজ ও নিজের উদ্যোক্তা হয়ে উঠা সম্পর্কে জানতে চাইলে কানিজ বলেন- “তাঁতের শাড়ি আমার প্রথম পছন্দ তাই আমাদের দেশের এই ঐতিহ্য- তাঁতের শাড়ি কে আরো অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমার এই ভিন্নধর্মী কাজে আমি আমার পরিবার এবং বন্ধুদের সম্পূর্ণ সাপোর্ট পেয়েছি যা শুনে হয়তো বা অনেকে অবাক হয়ে যায়। কারণ আমাদের সমাজের মানুষেরা নারীদের ব্যবসা করা এখনো মেনে নিতে পারেনি। সমাজে গুটি কয়েক মেয়েরাই উদ্যোক্তা হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছে। নিজের জন্য নেওয়া এই উদ্যোগের মাধ্যমে শান্তির অনুভূতি আসে। আমার উদ্যোগ আমার পরিচয় বহন করে। আর এই পরিচয় কে আমি আরো দৃঢ় ভাবে গড়ে তুলতে চাই”।
সহজিয়া’র সকল দায়িত্ব কানিজ নিজেই করে থাকেন। কানিজ এর পার্টনার ইসতিয়াক কানিজকে সর্বোচ্চ সাহায্য করে সোর্সিং এবং ফটো শুটিং এর জন্য। কানিজ এর সকল কাজে পার্টনার ইসতিয়াক এর সুচিন্তা কানিজ কে অনেক বেশি মানসিক সাপোর্ট দিয়ে থাকে। এছাড়া কাস্টমার হ্যান্ডেলিং ডেলিভারি সম্পর্কিত সকল কাজ কানিজকে একাই সামলাতে হয়।
সহজিয়ার যে সমস্ত পণ্য তৈরী করে তার মধ্যে কোটা শাড়ি, সফ্ট কোটা শাড়ি, কটন ড্রেস এ ব্লক প্রিন্ট, কটন কুর্তি ও ফতুয়া, ব্লক এবং স্টিচ এর কাজ করা জামা ওড়না, সুতি ড্রেস কম্বো, বেডশিট উল্লেখযোগ্য।
অনলাইন বিজনেস এর জন্য ধৈর্য ও সহনশীলতার প্রয়োজন অনেক বেশি।। কারন এত অল্প কয় দিনে কোন প্লাটফর্ম দাঁড়াতে পারে না।। এর জন্য উদ্যোক্তাকে আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে ধৈর্য সহকারে।। একটি সফল অনলাইন বিজনেস দাঁড়াতে ৩ বা ৪ বছর তো লেগেই যায়।। অনলাইন বিজনেস এর জন্য আরো অনেক কিছুই কানিজকে নতুন করে শিখতে হয়েছে। ডিজিটাল মার্কেটিং, পেজ ডেভলোপ করা, ফটোশুটিং, টার্গেট কাস্টমার নির্ধারন করা, একটি বিশ্বস্ত সোর্সিং ফিক্সড করা ইত্যাদি সম্পর্কে ধিরে ধিরেই নিজের জ্ঞান কে সময়ের সাথে আরো বাড়িয়ে তুলেছে উদ্যোক্তা কানিজ।
বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী সময়ে সহজিয়া পথচলা সম্পর্কে জানতে চাইলে কানিজ বলেন -“এত অল্প সময়ের মধ্যেই অনেক মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে পেরেছি এবং একটি সফল মেলা করেছি আমি আমার উদ্যোগ সহজিয়ার সাথে। করোনাকালীন সময়ে আমার সহজিয়ার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল কিন্তু এখন আবার পুরোদমে কাজ শুরু করেছি। ইনশাল্লাহ সময়ের সাথে এই ঘাটতি পূরণ করতে পারব। আমি নিজের ভিতরে আত্মবিশ্বাসের পরিবর্তন দেখেছি যেখানে কোন কিছু শুরু করার সময় ভাবতাম আমার দ্বারা সম্ভব না, আমি হয়তো পারবো না কিন্তু সেখানে এখন মনে হয় শুরু করি, আমার দ্বারা সম্ভব”।
কানিজ স্বপ্ন দেখেন- সময়ের সাথে কাজের আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়েই সহজিয়া প্রোডাকশন কে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান উদ্যোক্তা। সকলের কাছে সহজিয়া-Shohojiaa নাম টি সুপরিচিত হবে এটাই উদ্যোক্তার স্বপ্ন।
ডেস্ক রিপোর্ট, উদ্যোক্তা বার্তা