বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উদ্যোগের দেশের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও অগ্রগতির সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধকোটি মানুষ।
এমন পরিস্থিতিতে প্রতি বছর বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আয়োজনে উদযাপিত হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস।
২০২১ সালে দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো-‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়; আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহ্বান। ’
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালে জাতিসংঘের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্বের ৯০টি দেশের ৩০ থেকে ৩৫ কোটি আদিবাসী উদযাপন করে থাকেন দিবসটি।
দিবসটি উদযাপনের মূল লক্ষ্য হলো ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার ও তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন করে তোলা।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও,গাইবান্ধা, বগুড়া ইত্যাদি জেলাগুলোতে সাঁওতাল, শিং (গঞ্জু), ওঁরাও, মুন্ডারি, বেদিয়া মাহাতো, রাজোয়ার, কর্মকার, তেলী, তুরী, ভুইমালী, কোল, কড়া, রাজবংশী, মাল পাহাড়িয়া, মাহালী ইত্যাদি জাতিগোষ্ঠী বসবাস করছে।
অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, মুরং বা ম্রো, খিয়াং, লুসাই, পাংখোয়া,বম, খুমী ও চাকগোষ্ঠী বসবাস করছে।
আদিবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ধরণের পণ্য সারা দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য আদিবাসী দিবস উপলক্ষে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু কোডিভ চলাকালীন সময়ে তা সরকারি বিধিনিষেধ থাকায় সেটা সম্ভব হয়নি।
তবে চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পাঁচ দিনব্যাপী রাজধানীর মিরপুর কাজীপাড়া হেবাং রেস্টুরেন্টে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
সাবাংগী’ চাকমা শব্দ, অর্থ- কর্মসঙ্গী। চাকমা, মনিপুরী, তনচংগ্যা, গারো, মারমা সম্প্রদায়ের আদিবাসীরা মিলে আয়োজন করেছে সাবাংগী মেলা। এর আগেও সাবাংগী ২ বার মেলা আয়োজন হয়েছে কাজীপাড়া হেবাং রেস্টুরেন্টে।
হেবাং রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা এবং সাবাংগী মেলা আয়োজক সদস্য বিপলি চাকমা জানান, সাবাংগী মেলা মূলত আদিবাসীরা সম্প্রদায়ের মিলন মেলা । এই মেলা শুধুমাত্র পাহাড়ি অনলাইন উদ্যোক্তাদের হলেও সবাই জন্য এই মেলা উন্মুক্ত ছিল ।
২৭ জন আদিবাসী উদ্যোক্তা অংশ নেয় সাবাংগী মেলায়। পিনন হাদি, আলছোড়া, আজুলি, হুজি হারু, পয়সা মালা, চোকার, ধুতি-পাঞ্জাবি, কাটায় নেকলেস, হ্যান্ডমেড হারবাল প্রোডাক্ট, টাই-ডাই পোশাক, ব্যাগ, মনিপুরী শাড়ি, শুটকি, নিজ সম্প্রদায়ের জুয়েলারি সহ শতাধিক আদিবাসী পণ্যের প্রদর্শনী সাজিয়েছে এ মেলায়। উদ্যোক্তারা জানায় নিজেরা পণ্য উৎপাদন করে অফলাইনের পাশাপাশি যুগের সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইনে বিক্রি করে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য।
এর আগে গত বছর অনলাইনে ১০ দিনব্যাপী সাবংগী প্লাটফর্মে প্রথম বারের মতো অনলাইনে মেলা আয়োজন করা হয়।
সাবংগী প্ল্যাটফর্মের উদ্যোক্তা দুলু হুমোরী জানান, ‘সাবাংগী মূলত আদিবাসী নারী উদ্যোক্তা দ্বারা পরিচালিত একটি অনলাইন প্লাটফর্ম যেটার মূল হোতা হলেন ৬ জন পাহাড়ি নারী যাদের মধ্যে ৫ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা এবং একজন রিসেলার।’
আমাদের উদ্দেশ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আদিবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে পরিচিতি বাড়িয়ে নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক দৃঢ় করা, আর সময় সুযোগ মত সবাইকে নিয়ে মেলার আয়োজন করে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী হতে তরুণ সমাজকে আকর্ষিত করা।
তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা অল্প পরিসরে ঢাকায় মেলার আয়োজন করেছি বিঝুর আগে রাঙামাটিতে বড়সড় করে করার পরিকল্পনা করেছিলাম কিন্তু কোভিড ১৯ এর আবির্ভাবে আর কিছু সম্ভব হয়নি। যেহেতু এখন পরিস্থিতির কারণে আমাদের আদিবাসী দিবস প্রতিবছরের মত আয়োজন করে হয়তো করার সুযোগ থাকবে না, সবাই প্রায় এখন অনলাইনমুখী। তাই আমরা সবাই চিন্তা করলাম আমরা চাইলে তো আদিবাসী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে অনলাইনেও মেলার আয়োজন করতে পারি।’
জাতিসংঘ বাংলাদেশ-এর আবাসিক সমন্বয়কারী রবার্ট ডি ওয়াটকিন্স জানান, বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের নেতৃত্ব নিজ উদ্যোগেই গ্রহণ করেছে এবং ২০৩০ এজেন্ডা ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা অর্জনের অঙ্গীকার করেছে। এই প্রচেষ্টা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে যথেষ্ট উদ্যোগী ভূমিকা পালন করবে। এই প্রেক্ষাপটে, আদিবাসী ও উপজাতি সম্প্রদায়গুলো যেন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জনে তাদের পূর্ণ অবদান করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করার জন্য জাতিসংঘের সংস্থা, তহবিল ও কার্যক্রম বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকা এবং তাদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ ও চর্চাকে অব্যাহত রাখতে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত আন্তর্জাতিক বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপনের এই পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয়।
উদ্যোক্তা বার্তা রিপোর্ট