আত্মবিশ্বাস আর সাহসী পদক্ষেপ টিকিয়ে রেখেছে উদ্যোক্তা আফসানা কে

0
উদ্যোক্তা আফসানা আসফিয়া হক

‘মিগাটোনা’ শব্দটি শোনার সাথে সাথেই মনে হয় এটা কি জাপানি কোনো প্রতিষ্ঠান। এটার আবার অর্থ কি? আসলে মিগাটোনা হলো বাংলাদেশী একটি ব্র‍্যান্ড যার অর্থ খুশবু বা সুবাস। উদ্যোক্তা খাবার এবং পোষাক জগতকে সুবাসিত করে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তার মিগাটোনা ফুড এবং মিগাটোনা কালেকশনকে।

২০১৫ সাল থেকে উদ্যোগের পথচলা শুরু। ধীরে ধীরে তা বড় হতে থাকে উদ্যোক্তার হাত ধরে। শুরুতে উদ্যোগ সম্পর্কে প্রাথমিক কোনো ধারনা ছিল না তার। সেজন্য বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখিও হয়েছিলেন। পণ্য কোথায় থেকে সোর্স করবেন, কিভাবে মার্কেটিং করবেন, সঠিক হিসেবই বা কিভাবে রাখবেন আবার দামটা ঠিক কিভাবে নির্ধারণ করবেন এসব সমস্যার মাঝে মাঝেই মুখোমুখি হয়েছেন। পরিবারের সহায়তা এবং নিজের প্রচেষ্টায় সেগুলো কাটিয়ে উঠে ধীরে ধীরে সাবলীল ভাবেই উদ্যোগ পরিচালনা শুরু করেন।

বিসিক স্কিটি থেকে প্রথমে একটা কোর্স করেছিলেন তিনি। সেই কোর্স থেকেই তার শুরু। এরপর বারবার ছুটে গেছেন বিভিন্ন কারখানায় যাদের দিয়ে কাজ করাতে পারবেন। সেগুলো দেখেছেন, ঘুরেছেন, যাচাই করে সবকিছু বুঝার চেষ্টা করেছেন তিনি। উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে সর্বোচ্চ পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেছেন তিনি। এরপর একে একে এসএমই ফাউন্ডেশন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনিং, জুয়েলারি ডিজাইনিং সহ গ্রাফিক ডিজাইনিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো কোর্স গুলো সম্পন্ন করেন তিনি। রান্নার ওপর কোর্স করেন মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে, সেখান থেকেই করেন বেকারি কোর্স। সেলাই এবং কাটিং শেখার জন্য কোর্স করেছেন সিঙ্গার একাডেমী থেকে। পরবর্তীতে সিঙ্গার বাংলাদেশ থেকে অনুমোদন নিয়ে সেলাই প্রশিক্ষন সেন্টার চালু করেন ২০১৫ সালে থেকে। এখনও সেলাই প্রশিক্ষণ দিতে যাচ্ছেন তিনি বহু নারীকে।

ছোটবেলায় মায়ের হাত ধরে সেলাই এ হতে খড়ি হয়েছিল উদ্যোক্তার । বাবা ডাক্তার হওয়ায় ভেবেছিলেন মাস্টার্স করে চাকরী করবেন তিনি। অনার্স করতে করতে বিয়ে হয়ে যায় সেনাবাহিনীর অফিসার এর সাথে।  পড়াশোনা শেষ করার পর সেনাবাহিনীর স্কুলে শিক্ষিকা পদে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হয়ে সেখানে চাকুরি শুরু করেন। কিন্তু তার মন যেন আনচান করছিল। সেখান থেকে তিনি সিঙ্গার একাডেমী থেকে সেলাই প্রশিক্ষন দেওয়ার অনুমতি নিয়ে মাত্র ৩ জন নিয়ে শুরু করেন প্রশিক্ষন প্রদান।

উদ্যোক্তার এই জীবনের অনুপ্রেরনার গল্প শুনতে চাইলে তিনি বলেন, “অনুপ্রেরণা ছিল আমার মা ও মেয়ে, মায়ের প্রতিভা বিকশিত হতে পারে নি সংসারের চাপে,সেইটা আমার মনে দাগ কেটে ছিল।আর মেয়ের পোশাক তৈরি করতে যেয়ে আমার উদ্যোক্তা ভাবনা শুরু।”

কুকিং ছিল আফসানার প্যাশন বা ভালোবাসার জায়গা। রান্নার শো দেখার পাশাপাশি রান্না করতে করতে সময়ের সাথে বেশ দক্ষ হয়ে উঠলেন তিনি। শুরুর দিকে সিঙ্গার শোরুমে খাবার দিতে দিতে দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে খাবার সরবরাহ করার দিকে এগিয়ে গেলেন। প্রথমে একটা বেকারিতে কাপ কেক দিতেন। এখন অফিসে লাঞ্চ, ফ্রোজেন ফুড, ও পিঠা ডেলিভারি দিচ্ছেন তিনি।

তার ঝুলিতে রয়েছে বেশকিছু পুরষ্কার যা তাকে অনুপ্রেরনা দেয়। ‘কুকিং অ্যাসোসিয়েশন’ থেকে পিঠা প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়েছিলেন ২০১৮ সালে। ‘নিজের বলার মত একটা গল্প’ ফাউন্ডেশন থেকে সেরা ৫ জন এর মধ্যে অন্যতম মহিলা উদ্যোক্তা পুরষ্কার পেয়েছেন ২০২১ সালে। এছাড়াও উদ্যোক্তা জীবনে উল্লেখ করার মতো সম্মাননা অর্জন করেছেন তিনি।

সমাজ, দেশ নিয়ে উদ্যোক্তা হিসেবে তিনি কি ভাবেন সেটা জানতে চাইলে তিনি উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, “সমাজে প্রতিটা মানুষ ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে কাজ করবে,এক একটা পরিবার হবে এক একটা কারখানা,কেউ বেকার থাকবে না, কোন বাজে চিন্তা বা অভ্যাস হওয়ার সময় পাবে না।কর্ম ব্যস্ততায় নিজেরা স্বাবলম্বী হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”

তরুন সমাজের ব্যাপারে উদ্যোক্তার রয়েছে যুগান্তকারী চিন্তা। তিনি উদ্যোক্তা বার্তা কে বলেন, “তারুণ্য হল সজীবতায় ভরপুর কাদা মাটি যা দিয়ে বানানো যায় সবথেকে বড় প্রাসাদ।উদ্দীপনায় ভরপুর, প্রচণ্ড সাহসী, কর্ম চাঞ্চল্য ও চঞ্চলতায় ভরপুর, অসীম কর্মশক্তির অধিকারী, প্রযুক্তিতে বাজিমাত করতে পারে তারা। শুধু প্রয়োজন ধৈর্য্য ও পরিশ্রম তবেই বিশ্বজয় করবে লাল সবুজের তরুণরা।”

উদ্যোক্তা আফসানা স্বপ্ন দেখেন এবং বিশ্বাস করেন পরিশ্রমই পারে সফলতা এনে দিতে। আর সেই বিশ্বাস থেকেই উদ্যোক্তা তার স্ব মহিমায় এগিয়ে যাচ্ছেন।

সাকিব মাহমুদ,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here