আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপিত হলো রাজশাহীর বিউটি সেক্টরের স্বনামধন্য এবং নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান ওমেন্স ডল বিউটি পার্লারের ১৮ বছর পূর্তি উৎসব। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা।
বুধবার দুপুরে ওমেন্স ডল বিউটি পার্লারের রাজশাহী শাখায় উপস্থিত হয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ফ্লাওয়ার রিবন ও কেক কেটে আয়োজনের উদ্বোধন করেন। সেসময় সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যসহ ওমেন্স ডল বিউটি পার্লারের স্বত্ত্বাধিকারী তানিয়া আফরিন নিতু, ওমেন্স ডলের ক্লায়েন্ট এবং রাজশাহীর সর্ববৃহৎ গার্লস গ্রুপ রাজশাহী বিউটিজের এডমিন প্যানেলের সদস্যরা সেসময় উপস্থিত ছিলেন।
আঠারো বছর পূর্তিতে ওমেন্স ডল ও এর স্বত্ত্বাধিকারীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ডা. আনিকা ফারিহা জামান অর্ণা ‘উদ্যোক্তা বার্তা’কে বলেন, “অবশ্যই রাজশাহীবাসীর কাছে ওমেন্স ডল একটি আস্থাভাজন প্রতিষ্ঠান। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা রাখছি। আমরা সকলে তানিয়া আফরিন এর পাশে থাকবো, আগামী দিনের জন্য শুভকামনা রইলো।”
২০০৪ সালে রাজশাহীর শেখপাড়া এলাকায় উদ্যোক্তা তানিয়া আফরিন নিতুর মা হুরায়রা সুলতানা ওমেন্স ডল প্রতিষ্ঠা করেন। সেসময় কয়েকজন সহযোদ্ধা নিয়ে স্বল্প পরিসরে এটির যাত্রা শুরু হয়েছিল। মেয়ে তানিয়া আফরিন তখন খুবই অল্প বয়সী ছিলেন। মায়ের পার্লারে মাঝে-মাঝে আসতেন, কাজ দেখতেন, বসে থাকতেন, কিছুক্ষণ পর আবার চলেও যেতেন। এভাবেই বহু বছর কেটে যায়। পার্লারের পাশাপাশি রাজশাহীর জনপ্রিয় রেস্টুরেন্ট টিএফসির সূচনাও হয় হুমায়রা সূলতানার হাত ধরে। সেখানেও যেতেন তানিয়া। তবে, তখন তার মনে হয়নি একদিন এসব উদ্যোগের সঙ্গেই জড়িয়ে যাবেন তিনি।
তানিয়া আফরিনের জন্ম নানাবাড়ি এলাকা রাজশাহীতেই। তার বাবার বাড়ি বিক্রমপুর। সেখানে কয়েক বছর কাটিয়ে আবারও রাজশাহীতে ফিরে আসেন এবং দেশসেরা রাজশাহী কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শেষ করেন।
স্নাতক পড়ার সময়ও মাঝে-মধ্যে আসা হতো মায়ের পার্লারে। নিজের হাতে কনেও সাজাতেন কখনও-কখনও। ওইসময় সুনিপুণ হাতের কাজ দেখে সকলের প্রশংসায় ভাসতেন তানিয়া। এমনি করে আস্তে-আস্তে পুরোদস্তুর বিউটিশিয়ান হওয়ার আকাঙ্খা তৈরি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে পুরোদমে মন দেন এ কাজে।
রাজধানীর স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান উদ্যোক্তা জেরিনা আসগরের লিভিং ডল থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তানিয়া আফরিন। পরে দেশের বাইরে বিভিন্ন বিউটিফিকেশন ওয়ার্কশপে প্রশিক্ষণ নেন তিনি।
উদ্যোক্তা বার্তা’কে তিনি বলেন: মায়ের হাতে প্রতিষ্ঠানটির সূচনা। আমি মাস্টার্স শেষ করে পুরোদস্তুর এখানে মনোনিবেশ করি। আলহামদুলিল্লাহ, আজ ওমেন্স ডলের দুটি শাখা। একটা রাজশাহীতে এবং অপরটি ঢাকার কলাবাগান এলাকায়। আমি হয়তো আরো কয়েকটি ব্রাঞ্চ চালু করতে পারতাম, কিন্তু সবসময় প্রায়োরিটি দেই ওমেন্স ডলের প্রতি মানুষের আস্থায়। এ ধারা অব্যাহত রেখে আমি সামনে এগোতে চাই। বর্তমানে আমার সাথে ৪০ জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। তাদের মধ্যে সিংহভাগই এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে কাজ শুরু করেছেন। কেউ নতুন কাজে আসলে তার কাজ আমার মমত না হলে আমি প্রথমেই তাকে হাতে ধরে কাজ শিখিয়ে দেই। শুরু করেছিলেন মা, এরপর আমার এই কাজের প্রতি ভালোবাসা, শ্রম দিয়ে সকলের আস্থা অর্জন করতে পেরেছি। আমার বাবা এখন আমার পার্লারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পার্লারের কোথায় কি লাগবে, কি করলে আরো ভালো হয় সবদিকে তিনি লক্ষ্য রাখেন এছাড়াও আমার বড় বোন আমাকে বাইরের সকল প্রোডাক্ট এনে দেয়। আর সবথেকে বড় সাপোর্ট আমার স্বামীর যিনি প্রতিটি কাজে আমাকে উৎসাহিত করেন পাশে থাকেন। আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি একজন উদ্যোক্তার সফল হওয়ার পিছনে পরিবারের সাপোর্ট অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, ‘‘রাজশাহী এবং ঢাকা দু’ জায়গাতেই ওমেন্স ডলকে আরো বৃহৎ পরিসরে রূপ দিতে চাই। তবে, হুট করে নয়– আমি যেহেতু কাজের কোয়ালিটি মেইনটেইন করার চেষ্টা করি, তাই ধীরে ধীরে আরও অনেক সহযোদ্ধা তৈরি করে তারপর শাখা বাড়াবো যাতে ক্লায়েন্টরা কোনভাবেই নিরাশ না হন। এই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগোচ্ছি, মোটামুটি তিন বছরের মধ্যে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবো বলে আশা রাখছি।”
ব্রাইডাল মেকওভার, পার্টি মেকওভার, হেয়ার কালার, হেয়ার রিবন্ডিং, স্পা, মেনিকিউর, পেডিকিউরসহ পার্লারের যাবতীয় সেবা দিয়ে থাকে ওমেন্স ডল বিউটি পার্লার। তাদের বেশি প্রায়োরিটি ব্রাইডাল মেকওভারে। উদ্যোক্তা তানিয়া আফরিন বলেন, ‘‘ঈদের পর তিন থেকে চার দিনে ৪৫ থেকে ৫০টা ব্রাইড সাজাতে হয় আমাদের, আর ডিসেম্বরে বিয়ের সিজনে ১০০টির বেশি ব্রাইড থাকে। রাজশাহী এবং ঢাকা দুটি স্থানে আমাকে যাতায়াতের মধ্যে থাকতে হয়। আমার মায়ের বাসা রাজশাহীর পাঠানপাড়া এলাকায়, রাজশাহী আসলে এখানে থেকেই আমি কাজগুলো নিশ্চিন্তে করতে পারি। আমার সিনিয়র সহযোদ্ধারাও অনেক ভালো সাজান। আমরা মূলত পার্লারেই মেকওভার করে থাকি, তবে মাঝে মধ্যে কিছু ক্লায়েন্টের অনুরোধে বাইরেও আমাদের সিনিয়র সহযোদ্ধাদের পাঠাতে হয়। তবে সেটা খুবই রেয়ার।”
তানিয়া আফরিন বলেন: উদ্যোক্তা বার্তা যেহেতু উদ্যোক্তাদের নিয়ে কাজ করে, এখানে বিভিন্ন সেক্টরের নারী, পুরুষ উদ্যোক্তা রয়েছেন, সবার উদ্দেশ্যে বলতে চাই– আপনারা যে কাজই করেন না কেন, কোয়ালিটি মেইনটেইন করেন। ব্যালেন্স করতে পারাও আমাদের জন্য অনেক বড় শিক্ষা। আমার যেহেতু ছোট বাচ্চা আছে, সবার আগে আমার কাছে তার গুরুত্ব বেশি। তারপর আমার কাজ, আমি যতটুকু কাজ করবো ততটুকুই কোয়ালিটি মেইনটেইন করে করবো। তাহলে নিশ্চয়ই দশজন আমার সাথে থাকবে, পাশে থাকবে। আপনারাও এই ফর্মূলা কাজে লাগাতে পারেন।
তামান্না ইমাম
উদ্যোক্তা বার্তা