আগামী বছর থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলার পাশাপাশি উদ্যোক্তা সম্মেলন করার ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।
বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদাপূর্ণ জীবিকা ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৭ জানুয়ারি শনিবার চাকরি মেলার উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান এবং সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও বিসিসির সক্ষমতা উন্নয়ন ও মানব সম্পদ বিষয়ক সদস্য মোহাম্মদ নাভিদ শফিউল্লাহ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিসিসির নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার ।
প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, প্রশিক্ষিত প্রতিবন্ধী বা বিশেষভাবে সক্ষম ভাই-বোনদের মধ্যে যারা উদ্যোক্তা হতে চান তাদের তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা সিডমানি হিসেবে পুঁজি প্রদানের সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ভাইবোনেরা জব সিকার না হয়ে জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারবেন।
তিনি প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে শিক্ষিত প্রতিবন্ধী ভাই-বোনদের চাকরির সুব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন “প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলা” চাকরিদাতা ও চাকরিপ্রত্যাশীদের মধ্যে সেতু বন্ধন তৈরি করবে।
আইসিটি বিভাগের এটুআই প্রকল্পের একজন উদ্ভাবক টকিং হোয়াইট স্টিক আবিষ্কার করেছেন উল্লেখ করে পলক বলেন, একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে স্পর্শ বা ধাক্কা খাওয়ার আগেই টকিং হোয়াইট স্টিক কথা বলে সতর্ক করে দেয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের আইসিটি বিভাগ থেকে হুইল চেয়ার দেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাচ্ছন্দে চলতে দেশে স্বল্প খরচে উচ্চ-প্রযুক্তি সম্বলিত হুইলচেয়ার তৈরির পদক্ষেপ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় কোন প্রতিবন্ধী ভাই-বোন যেন কোন নাগরিক সুবিধা থেকে বিন্দুমাত্র বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করব।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ বলেন, সরকারি হিসেবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংখ্যা অনেক যা ৩০ লাখেরও অধিক। তাই বাংলাদেশ সরকার এই বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিদের নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে এবং তাদের জন্য প্রকল্প, প্রতিযোগিতা, চাকরি মেলাসহ নানা আয়োজনের মাধ্যমে তাদেরকে সামনে নিয়ে আসার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে।
এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব শেখ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে থাকার সর্বদা চেষ্টা এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ বিশেষ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে থাকে এবং কর্মক্ষেত্রে তারা ভালো করছে ।
সিএসআইডির নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, আমাদের প্রতিটি সন্তান যারা এই মেলায় এসেছেন তাদের চাকুরি প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিগণ অনিশ্চিতভাবে না ঘুরে তাদের জন্য সুযোগ প্রয়োজন। স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা প্রতিটি প্রতিবন্ধী মানুষ স্মার্ট হতে চাই।
বিসিসির নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার বলেন, সমাজের কল্যাণে সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকে একত্রিত হয়ে সমাজকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্যে তিনি আহ্বান জানান।
রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর অফিস ভবনে অনুষ্ঠিত মেলায় সকাল থেকেই অংশ নেয় ৫৪টি আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। এর আগে সারাদেশ থেকে প্রায় ৫ শতাধিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি সিভি জমা দেন অনলাইনে। মেলায় সরাসরি উপস্থিত হয়েও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তি বা প্রতিবন্ধী ব্যক্তি চাকরিপ্রার্থীরা সিভি বা জীবনবৃত্তান্ত জমা দেওয়ার সুযোগ পান। বিভিন্ন ট্রেডবডি বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যভুক্ত আইসিটি ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে বেসিস, ই-ক্যাব, বাক্কো, আইএসপিএবি, বিসিএস, কোয়াব ছাড়াও আইসিটি শিল্পের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং এনজিও ব্যুরোর তালিকাভুক্ত প্রতিবন্ধিতা কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। যাদের তথ্য প্রযুক্তির দক্ষতা রয়েছে তাদের নিয়োগের লক্ষ্যে ইন্টারভিউ গ্রহণ করে মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো। ডাটা এন্ট্রি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, অ্যানিমেশন, ওয়েব ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, কল সেন্টার এজেন্ট, প্রোগ্রামিংসহ নানা প্রকার পদের জন্য প্রতিবন্ধী চাকরিপ্রার্থীদের সংক্ষিপ্ত তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করে নিয়োগের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।
অনুষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরি মেলা ২০২২ এর শীর্ষ চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সম্মাননা ক্রেস্ট গ্রহণ করে জেনওয়েব টু লিমিটেড।
২০১১ সালে বিসিসির মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে আইসিটি প্রশিক্ষণ চালু করা হয়। এরই আলোকে আইসিটি প্রশিক্ষণ নেওয়া প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে চাকরিপ্রার্থী ও চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ২০১৫ সাল থেকে চাকরি মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। বিগত চাকরি মেলাগুলোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের পরিসংখ্যান থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চাকুরী প্রাপ্ত প্রতিবন্ধী ব্যক্তির সংখ্যা হচ্ছে: ২০১৫ সালে ৩২, ২০১৬ সালে ৬০, ২০১৭ সালে ১১৫, ২০১৮ সালে ১৭৬, ২০১৯ সালে ৮৬, ২০২০ সালে ৮০, ২০২১ সালে ১২৮ এবং ২০২২ সালে ২০২ অর্থাৎ গত ৮টি চাকরি মেলাতে মোট ৮৭৯ জন। একইসাথে চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল: ২০১৫ সালে ৫টি, ২০১৬ সালে ৭টি, ২০১৭ সালে ১২টি, ২০১৮ সালে ১৫টি, ২০১৯ সালে ২৩টি, ২০২০ সালে ৩২টি, ২০২১ সালে ৪০টি এবং ২০২২ সালে ৪৮টি প্রতিষ্ঠান।
ডেস্ক রিপোর্ট
উদ্যোক্তা বার্তা