৬ বোন এক ভাইয়ের সংসার। দেশ স্বাধীন হবার পর বাবা মারা গেলে পরিবারে নেমে আসে এক শূন্যতা। বিয়ের জন্য উচ্চশিক্ষা সম্ভব হয়নি বেবী হাসানের। এসএসসি পড়ুয়া অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায়। বিয়ের পরও সংগ্রামী বেবী হাসানের সংগ্রাম থেমে থাকেনি। পরিবারের স্বচ্ছলতা আনবার জন্য ১৯৮৩ সালে চাকরী করতে শুরু করেন কোয়ালিটি কন্ট্রোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক একটি গার্মেন্টসে।
পরিশ্রমী এবং আত্মপ্রত্যয়ী হবার জন্য দ্রুত কাজ শিখে ফেলেন বেবী এবং উন্নতি করতে থাকেন তার চাকুরীতে। দিনে ২০ ঘন্টা কাজ করেছেন। কাজে অবহেলা করেননি এবং কাজে ফাঁকি দেননি। তরতর করে উঠতে থাকলেন যোগ্যতার সিঁড়ি। হতে থাকল পদন্নোতি। সুপারভাইজার, ইনচার্য, প্রোডাকশন ম্যানেজার, এতটাই সফলতার সাথে কাজ করেছেন বেবী। স্বীয় কর্মে ওয়ার্কিং ডিরেক্টর হিসেবে স্থান করে নিলেন।
চট্রগ্রাম আন্তর্জাতিক গার্মেন্টস শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক জোন যেখানে আন্তর্জাতিক মানের সকল কাজ অত্যন্ত স্বল্প সময়ে শিখে নিজের অবস্থান গড়ে ফেললেন বেবী। ১৯৯০ সাল। আন্তর্জাতিক বায়িং হাউজের চট্রগ্রাম বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করলেন। সকল ফ্যাক্টরী চিনে গেলেন, সকলের কাজের মান সম্পর্কে জেনে গেলেন।
১৯৯৫ সাল। নিজে ব্যবসা শুরু করলেন। চাকুরীর পাশাপাশি। অনেক কাজ দিলেন অনেক ফ্যাক্টরীতে। কিন্তু নিজের ব্যবসায়িক অংশটা বুঝে নিতে পারেননি বা বুঝিয়ে দেননি অনেক ফ্যাক্টরি। তাই নিজেই দৃড় সংকল্পে নিজের প্রত্যয়ে দাঁড়া করালেন বেবী। নিজেই বায়িং হাউজ দিলেন। প্রথমে একজন পার্টনার সঙ্গে থাকলেও পরে কাজ এবং ব্যবসার সুবিধার্থে একাই পরিচালনা করতে শুরু করলেন বিএস ফ্যাশন। সংগ্রাম চলছিল, চলতেই থাকল। ২০০০ সালে মনোয়ারা হাকিম আলী এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং সিডাব্লিউসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট তার অনুপ্রেরণায় ৩৫ জন উদ্যোক্তার সাথে বেবী গেলেন কলকাতায়। তার পণ্য নিয়ে অনেক সাড়া মিলল।
চোখ খুলে গেল। মনোয়ারা হাকিম আলীর অনুপ্রেরণা এবং উৎসাহে নেপাল, মালয়েশিয়া, লন্ডন, কানাডা, মেক্সিকো, নানান দেশে ট্রেড ফেয়ারে অংশ নিলেন বেবী হাসান। অনেক কাজে বায়ারদের সাড়া পাওয়া গেলো। বড় ভলিউমে কাজ শুরু হল। নিজের অফিস করলেন হালিশহরে পরে অফিস নিয়ে এলেন ফইল্যাতলী বাজার। নীটের কাজ ভীষণ ডিমান্ড সারা বিশ্বজুড়ে। নানা পোষাকের বায়ারদের চাহিদা মত অর্ডার এবং সেগুলো মানসম্মত ফ্যাক্টরী থেকে কাজ করিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে নিজের এক সুপরিসর ব্যবসা ভুবন গড়ে তুললেন বেবী হাসান। ৫০ জনের মত কর্মীর কর্মসংস্থান করেছেন। তারা আজ অর্থনৈতিকভাবে পেয়েছে মুক্তি। আজ ইউরোপে এবং সাউথ আফ্রিকার বাজারে যাচ্ছে বেবী হাসানের বায়িং হাউজ থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন গার্মেন্টস পণ্য।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বায়ার এবং সাথে বড় বায়ারদের কাছে মধ্যপ্রাচ্য অনেক বায়ার আজ কিনছেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস এর পণ্য উদ্যোক্তা বেবী হাসানের বায়িং হাউজ বা তার প্রতিষ্ঠান থেকে।
টেকনিক্যাল কাজ শিখে যাত্রা শুরু, ছোট্ট করে কাজ শুরু করেছিলেন নিজে নিজের স্বচ্ছলতার আনবার জন্য, নিজের সংসার, নিজের জীবন যুদ্ধে জয়ী হবার জন্য। আজ ৫০ জনের উপর কর্মী নিয়ে কর্মসংস্থান করে পরিচালনা করছেন স্বীয় ব্যবসা। প্রতিদিনই গড়ে প্রায় ২টি ফ্যাক্টরিতে নিজের বায়িং হাউজের অর্ডার দেয়া কাজের পণ্য উৎপাদন চলছে। এবং সেই সাথে সফলতার সাথে পরিচালনা করছেন প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা মূল্যমানের ব্যবসা।