আলাদিনের যাদুর চেরাগের কথা শুনেছেন নিশ্চয়ই? ঘষা দিলেই বের হয় বিশাল এক দৈত্য, যে একে একে পুরন করবে মনের তিনটি ইচ্ছে। বাস্তবে এমন চেরাগ বা দৈত্যের কোন অস্তিত্ব না থাকলেও আরব্য রজনীর রূপকথার গল্পে এমন দৈত্যের দেখা মেলে ভুরি ভুরি। তবে উদ্যোক্তা মাশরুর হান্নান তৈরি করেছেন এমনই একটা চেরাগ, যার নাম দিয়েছেন ‘জাদুপিসি’।
চেরাগ ঘসা দিলেই যেমন দৈত্য বের হয় ঠিক তেমনি এই জাদুপিসি ডিভাইসটি আপনার সেই মান্ধাতার আমলের পুরাতন সাদাকাল বা আজকের দামী টিভিতে সেট আপ করলেই পুরন করা যাবে হাজারো ইচ্ছে। বোকা বাক্স হয়ে যাবে স্মার্ট বক্স।
টিভিকে ভিন্নতা প্রদানের লক্ষ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে এই ডিভাইসটি তৈরীর উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাংলাদেশি তথ্য-প্রযুক্তিবিদ উদ্যোক্তা মাশরুর হান্নান। লন্ডনে থাকাকালীন সময়ে ২০১৪ সালে তিনি বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধদের কথা চিন্তা করে প্রথম এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন, যেন অবসরে তারা বিনোদন পেতে পারেন। কিন্তু উদ্যোগ গ্রহণ এবং কিছুটা অগ্রসর হওয়ার পর হঠাৎ মায়ের অসুস্থতার জন্য তাকে দেশে ফিরে আসতে হয়।
প্রায় ৪ বছর পর ২০১৮ সাল। ঢাকার বনানীতে আবার নতুন উদ্যোমে কাজ শুরু করেন। জাদুপিসি তৈরীর সুসংগঠিত একটা দল গঠন করেন। তিনি রিবুট কনসালট্যান্ট এর দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন দিক সামলান ওয়াকিল আহমেদ। এছাড়াও মান উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত আছেন দেশের প্রযুক্তিবিদদের একটি দল এবং বিদেশী পরামর্শক।
কম্পিউটারের প্রায় ৮০ ভাগ কাজ করা সম্ভব এই ছোট্ট যন্ত্র স্থাপনের মাধ্যমে। সিআরটি, এলসিডি ও এলইডি যেমন টিভিই হোক, জাদুর ছোঁয়ায় যেন সেটি একটি পূর্ণ ডেস্কটপ কম্পিউটার হয়ে যাবে। অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা সহ স্মার্টফোনের যাবতীয় সুবিধাগুলো উপভোগ করা যাবে। মোবাইল সিমকার্ড যুক্ত করলেই কম্পিউটার আর ফোনের মিলিত রূপেও ব্যবহার করা যাবে। কাজের দিক থেকে বাজারে প্রচলিত এমন ধরণের সব যন্ত্র থেকে এটি একেবারেই অনন্য।
থাকছে নিয়ন্ত্রণের জন্য কি–বোর্ড ও মাউস যুক্ত করে নেওয়ার সুযোগ। ব্যবহারকারীর ধরণ বুঝে জাদুপিসির আলাদা সংস্করণ থাকবে। ন্যূনতম বৈশিষ্ট্যের জাদুপিসির দাম শুরু হবে ৫ হাজার টাকা থেকে এবং ধরণ অনুযায়ী তার তারতম্য হবে।
উদ্যোক্তা বার্তার সাথে জাদুপিসির প্রতিষ্ঠাতা ও কারিগরি প্রধান মাশরুর হান্নানের কথা হলে তিনি জানান, ‘তুলনামূলক অনগ্রসর, স্বল্প আয়ের এবং আধুনিক সুবিধাবঞ্চিত এলাকাগুলোতেই প্রথমে এই জাদুপিসির কার্যক্রম ছড়িয়ে দিতে চাই। তবে জাদুপিসি কোনো একটি শ্রেণির জন্য তৈরি করা হচ্ছে না। বরং কাজের ধরণ অনুযায়ী সংস্করণের পরিকল্পনা রয়েছে। আমাদের প্রথম লক্ষ্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা। কন্টেন্ট বা অ্যাপ্লিকেশন ফিক্সড থাকবে না এতে বরং ব্যবহারকারীরা প্রয়োজন মতো অ্যাপ ইন্সটল করে নিতে পারবে’।
কম মূল্যে কম্পিউটার তৈরির এই উদ্যোগ একেবারে চূড়ান্ত পর্যায়ে। পরীক্ষা মূলক পর্যবেক্ষণ সফল ভাবে শেষ হয়েছে, খুব শীঘ্রই ‘জাদুপিসি’ পাওয়া যাবে আপনার পাশের কম্পিউটারের দোকান গুলোতে।
ডিজিটাল দেশের প্রতিটি প্রান্তিক মানুষও পাবে ডিজিটাল সার্ভিস সেই মহৎ সামাজিক উদ্যোগ নিয়ে কাজ করায় সাম্প্রতি ওয়াই গ্যাপের (Y-gap) এক প্রতিযোগিতায় সারাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করা হাজার হাজার প্রতিযোগিদের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তিবিদ উদ্যোক্তা মাশরুর হান্নান প্রথম ১২ তে স্থান করে নিয়েছেন।
বাংলাদেশের সামাজিক উদ্যোক্তাদের স্বীকৃতি দিতে এবং তাদেরকে এগিয়ে নিতে ওয়াই গ্যাপ (ygap) কাজ করে চলেছে ২০১৬ সাল থেকে। এ পর্যন্ত তাঁরা প্রায় ৭৫ জন সামাজিক উদ্যোক্তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
বিপ্লব আহসান
স্পেশাল করেস্পন্ডেন্ট ,উদ্যোক্তা বার্তা