গল্পটা তিন বোন আর এক ভাই এর মধ্যে সুবচেয়ে ছোট পরিবারের সবার প্রিয় কাজী সানজিদা আক্তার সারার। সারার জন্ম, বেড়ে উঠা, পড়াশোনা সবকিছুই লালমনিরহাটে। তার বাবা শামসুল আলম ব্যবসায়ী এবং মা সুফিয়া আক্তার গৃহিণী। ২০১১ সালে বিয়ে হয় মোঃ শামীম চৌধুরীর সাথে যিনি বাংলাদেশ পুলিশে কাজ করছেন। দুটি সন্তানের মা সারা, স্বামীর চাকরীর কারনে বাস করছেন ঢাকার ডেমরাতে।
ছোটবেলা থেকেই সারার পড়াশোনার ঝোঁক খুব একটা ছিলো না। তাই ইকোনমিক্স নিয়ে অনার্সে ভর্তি হয়েও একটা পর্যায়ে ছেড়ে দেন পড়াশোনা। সারার মূল আকর্ষণের জায়গা ছিলো সৃজনশীল কাজ। আর তাই বিয়ের আট বছর পর ২০১৯ সালে শুরু করেন নিজের হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যবসা। স্বামী শামীম চৌধুরীর কাছে থেকে ২,০০০ টাকা মূলধন নিয়ে শুরু হয় এই উদ্যোক্তার যাত্রা। ঢাকায় কিছুদিন অবস্থান করার সময় চারপাশে খুঁজে পেলেন কাজ করার বিভিন্ন ধরনের আইডিয়া। বুটিক্স ট্রেনিং সেন্টার কথা বলে খুঁজে পেলেন বিশাল ক্রাফটের জগত থেকে তার জন্য যথোপযুক্ত হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ। ক্ষুদ্র পরিসরে যাত্রা শুরু করে সারা হ্যান্ডিক্রাফটস।
একই সাথে সংসার এবং হ্যান্ডিক্রাফটের ব্যবসা করা সুবিধা হবে এই পরিকল্পনা থেকেই নিয়ে নিলেন দুই দিনের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এলেন ডেমরায়। সাথে নিয়ে এলেন কিছু কাঁচামাল আর মেশিন। কোমর বেঁধে শুরু করলেন হ্যান্ডিক্রাফটের কাজ। একে একে ক্লে, মেটাল, বিডস্ দিয়ে তৈরী করলেন আকর্ষণীয় সব গয়না। অল্প সময়ে ক্রেতাদের থেকে পেলেন আশানুরূপ প্রতিক্রিয়া। প্রতিদিনই কমপক্ষে তিন থেকে চারটি অর্ডার পাচ্ছেন। মাত্র ২,০০০ টাকার মূলধন এখন প্রায় এক লক্ষ টাকার মূলধনে পরিনত হয়েছে।
উদ্যোক্তা বার্তাকে তার যাত্রাপথের প্রতিবন্ধকতাও জানান উদ্যোক্তা সারা। ২০১৯ সালে শুরু করে ভালোই চলছিলো তার ব্যবসা। অনলাইন এবং অফলাইন দুটো প্ল্যাটফর্মেই কাজ করতে থাকেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই ২০২০ সালে শুরু হওয়া করোনা মহামারী পুরো বিশ্বকে যেন স্তব্ধ করে দেয়। থেমে যায় সকল কার্যক্রম। করোনার ভয়াবহ প্রভাবে থমকে যায় জীবনের গতি। করোনার এই প্রভাব তরুণ উদ্যোক্তা সারার জীবনেও বাধার সৃষ্টি করে। অফলাইনে তেমন ভাবে কাজ এগিয়ে নিতে পারছিলেন না। হতাশায় অনলাইন কাজেও তেমন মনোযোগ দিতে পারছিলেন না। এদিকে সৃজনশীল কাজ বোঝে এমন কোনো কর্মীও পাচ্ছিলেন না তার কাজের প্রসার আরও বিস্তৃত করতে।
তবে দমে যাননি জীবন যোদ্ধা উদ্যোক্তা সারা। বরং সবকিছু ভুলে নতুন উদ্যোমে আবারও শুরু করেন, অনলাইন প্রচুর সময় দিতে শুরু করলেন। সেই সাথে ধীরে ধীরে অফলাইনেও কাজের প্রসার ঘটাতে লাগলেন। সব বাঁধা বিপত্তি জয় করে আবারো পুরো দমে কাজ করছেন তিনি। এখন গয়না তৈরীর পাশাপাশি নিজেকে প্রস্তুত করছেন আরো কিছু সৃষ্টিশীল কাজের জন্য যার মধ্যে রয়েছে পাটের তৈরী ব্যাগ। শুধু তাই নয়, নতুন উদ্যোক্তারা সারার কাছে থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ করে তৈরী করছেন তাদের নিজেদের কর্মসংস্থান। উদ্যোক্তা বার্তাকে এক প্রশ্নের জবাবে সারা বলেন, “আমি বিভিন্ন ফেলে দেয়া বোতল, নিউজ পেপার, কাপড় ইত্যাদি রিসাইকেলিং করি। এটা আমার ভীষণ পছন্দের কাজ।” এছাড়াও নাগরিক টিভিতে প্রচার করা হয়েছিল তার পণ্য যেটা তার কাজের অনেক বড় একটা প্রাপ্তি। তার এই পুরো উদ্যোগে পাশে পেয়েছেন তার পরিবারকে।
নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সারার একটাই উপদেশ, কাজ করে যেতে হবে বিভিন্ন বাধা বিপত্তির মধ্যে থেকেও। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের তিনি কখনোই হাল ছেড়ে না দেয়ার আহ্বান জানান। মেয়েদের নিজেদের একটা পরিচয়, নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশে স্বাবলম্বী হওয়া খুব জরুরী বলে মনে করেন উদ্যোক্তা সারা। ভবিষ্যতে নিজের একটা শোরুম এবং বৃহৎ পরিসরে বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির স্বপ্ন সৃষ্টিশীল উদ্যোক্তা সারার।
মার্জিয়া মৌ
উদ্যোক্তা বার্তা