একটি মাত্র পণ্য, ভিন্ন কালার সাথে ভিন্ন ডিজাইন। একটি মেয়ের সাধারণ গৃহবধূ পরিচয় ছাপিয়ে নামের আগে যুক্ত করলো শাহী কুশন হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী। তিনি শাওলিয়া শিলা। যেখানে দু’বছর আগে তিনি সকলের কাছে বাবা এবং স্বামীর পরিচয়ে পরিচিত ছিলেন, আজ সেই বাবা এবং স্বামী গর্ব করে দশজনের কাছে শাওলিয়ার প্রতিষ্ঠান শাহী কুশন হাউসের গল্প করেন।
কুশন নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা শাওলিয়া শিলা। প্রতিষ্ঠানে পণ্য বলতে শুধু মাত্রই কুশন। এই একটি পণ্য, ভিন্ন-ভিন্ন কালার, ভিন্ন-ভিন্ন ডিজাইনে সেজে উঠে নানা রূপে। কখনও রেড ফ্লাওয়ার কুশন, কখনও লাভ কুশন, রাউন্ড কুশন, রাউন্ড ফ্লাওয়ার কুশন, চারকোণা কুশন। উন্নতমানের ভেলভেট কাপড় এবং ফোম দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব। রাজশাহী শহরে তো বটেই, পাশাপাশি দেশের অনেক জেলায় নিয়মিত যাচ্ছে শাহী কুশন হাউসের নান্দনিক ডিজাইনের কুশন। দেশের বাইরে লন্ডনে দু’বার গেছে শাওলিয়া শিলার পণ্য। কুশন তৈরির যাবতীয় সামগ্রী নিজ হাতে দেখে ক্রয় করতে পছন্দ করেন শাওলিয়া।
২০২০ সালে ২,৫০০ টাকা নিয়ে উদ্যোক্তা জীবন শুরু। ইচ্ছে ছিল এমন কোন পণ্য নিয়ে কাজ করবেন যা আর দশজন কাজ করছেন না। পাশাপাশি পণ্যটি হবে ইউনিক। অনেক ভাবনা চিন্তা শেষে সিদ্ধান্ত নিলেন কুশন নিয়ে কাজ করবেন। এরপর ইউটিউব দেখে কুশন তৈরির কৌশল শিখে ফেলেন শাওলিয়া।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2022/07/fgdhsrthj.jpg)
সকলে তার পণ্য কিভাবে গ্রহণ করছেন সেটি যাচাই করতে বেশকিছু কুশন তৈরি করে বাসায় রাখলেন। কিছুদিন পর বাসায় অতিথি আসলে তাদের এত পছন্দ হয়ে যায় যে ফেরার পথে তারা কুশনগুলো কিনে নিয়ে যান। যখন দেখলেন আত্মীয়-স্বজনরা তার পণ্য সাদরে গ্রহণ করছেন তখন অনলাইনে ‘আমরা রাজশাহীর উদ্যোক্তা গ্রুপ’-এ যুক্ত হয়ে পোস্ট করতে শুরু করলেন শাওলিয়া। এই গ্রুপটির মাধ্যমেই অনলাইনে তার প্রথম সেল হয়। তারপর থেকে এই গ্রুপের সাথে যুক্ত রয়েছেন তিনি। সম্প্রতি শেষ হওয়া বিসিক ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলনে অংশ নিয়েছিলেন শাওলিয়া। তিনদিনের মেলায় অভাবনীয় সাড়া পেয়েছেন তিনি।
উদ্যোক্তা শাওলিয়া শিলা বলেন, “আমার বাবা এবং ভাইয়েরা ব্যবসা করেন। ছোটবেলা থেকেই আমি ব্যবসায়ীক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। আমার বাবা আমার অনুপ্রেরণা। তিনি আমার ভাইদের যেমন শিখিয়েছেন তোমাদের স্বাবলম্বী হতে হবে, স্বাধীনভাবে বাঁচতে হবে; আমাকেও ঠিক একই শিক্ষায় বড় করেছেন। তিনি সবসময় আমাকে বলতেন, স্বাবলম্বী হতে হবে। ছোটবেলা থেকে এই যে কথাটা সবসময় আমাকে ভাবাতো। পরবর্তীতে বিয়ের পর আমার স্বামীও একইভাবে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন নিজের পরিচয় তৈরি করার জন্য। আলহামদুলিল্লাহ, সকলের দোয়ায় তা সম্ভব হচ্ছে। একটা সময় শুধুমাত্র আমার পরিচয় ছিলো আমি বাবা আলহাজ্ব মোঃ সোলাইমান আলীর মেয়ে, পরবর্তীতে যোগ হলো মোঃ সুলতানুর রহমানের স্ত্রী। এখন তাদের ওই পরিচয়ের সাথে আমার নতুন এবং নিজস্ব পরিচয়- শাহী কুশন হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী শাওলিয়া শিলা।”
এই উদ্যোক্তার জন্ম থেকে বেড়ে উঠা রাজশাহীর ভদ্রা এলাকায়। নগরীর মাদার বক্স হোম ইকোনমিক্স কলেজ থেকে পড়াশোনা শেষ করেন তিনি। উদ্যোগটি শুরু করেছিলেন একা হাতে, আজ তার সাথে দু’জন সহযোদ্ধা কাজ করছেন। দু’বছরের ব্যবধানে এই উদ্যোক্তার ৭০ শতাংশই রিপিট কাস্টমারের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। আজ নিজের হাত খরচের জন্য আর অন্যের কাছে হাত পাততে হয় না এই তরুণীর।পাশাপাশি ইচ্ছে হলে নিজ সন্তান, স্বামী, বাবা-মা সকলের জন্য পছন্দের উপহারটি কিনে হাতে তুলে পারেন নিজ উপার্জনের অর্থে।
![](https://uddoktabarta.com/wp-content/uploads/2022/07/gkjsfkdghsgh.jpg)
লন্ডনে যে ক্রেতা কুশন অর্ডার করেছিলেন সেটি দেখে ভালো লেগে গেলে লন্ডন থেকে আরও একজন ক্রেতা কুশন নিয়েছেন শাহী কুশন হাউস থেকে। আর দেশের ভেতরে এক ক্রেতা থেকে আরেক ক্রেতার কাছে ছড়িয়ে পড়ছে তার নাম। শাওলিয়ার অনেক ক্রেতা তাকে বলেছেন শো-রুম নেওয়ার জন্য যাতে তারা নিজে এসে পছন্দের পণ্যটি সংগ্রহ করতে পারেন। বর্তমানে এই বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করছেন তিনি।
তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র চাকরির পেছনে না ছুটে নিজে কিছু করার অবারিত সুযোগ আছে এই দেশে। তরুণ প্রজন্মকে তাই বসে না থেকে স্বাবলম্বী হওয়ার আহবান উদ্যোক্তা শাওলিয়া শিলার।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা