৩ বন্ধু যখন পার্টনার

0

স্কুলজীবন থেকে একসঙ্গে আছেন জয়, পারভেজ ও মোস্তফা। গড়ে তুলেছেন `অন্তর বন’ নামে এক অন্যরকম কর্মভুবন। শৈশবের বন্ধুত্ব থেকে বড়বেলায় ব্যবসার উদ্যোগ, সেই উদ্যোগে আরও গভীর বন্ধুত্ব। দুটি প্রতিষ্ঠান ‘অন্তর-বন’ ও ‘রুট শপ’ ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনজন মিলে।

বন্ধুদের ব্যবসায়িক ‘পার্টনার’হয়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাইলে, মোহাম্মদ রাজ হোসেন জয় বলেন, ‘আমরা ২০২০ সালে করোনার শুরুতে কিছু একটা ভিন্নরকম প্রোডাক্ট নিয়ে অনলাইনে সেল করার উদ্যোগ নেই। শুরু করি গার্ডেনিং প্রোডাক্ট নিয়ে। যদিও শুরুতে আমরা জানতাম না যে কোথায় গাছ পাবো, কারাই বা আমাদের হোলসেল রেটে গাছ দেবেন। কিন্তু আমরা থেমে থাকিনি। বাইক দিয়ে ঘুরে ঘুরে মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে খুঁজতে থাকি। নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি যোগ করে মোবাইল ক্যামেরা দিয়ে গাছের ছবি ধারণ করি। এরপর অনলাইনে আমাদের পেজে ছবি ছাড়ি। কিছুদিনের মধ্যেই কাস্টমারদের ভালো সাড়া পাই।’

মোহাম্মদ শামীম পারভেজ জানান: অন্য পেজ থেকে আমাদের পেজে প্রোডাক্ট খুবই আলাদা হওয়ায় কাস্টমারের রেসপন্স খুব ভালো পাই। যার কারণে আমরা দ্রুত আমাদের ক্যাটাগরি বাড়াতে পারি। শুরুতে গাছের ডেলিভারি দেওয়াটা ছিল মোটামুটি অনেক চ্যালেঞ্জের বিষয়। শুধুমাত্র ঢাকা শহরের মধ্যে আমরা পার্সেল ডেলিভারি করতাম। পরে ডিমান্ড অনুযায়ী বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ডেলিভারির ব্যবস্থা করি।

বিনিয়োগ ও কর্মী সম্পর্কে মোহাম্মদ মোস্তফা সরদার বলেন, ‘তিন বন্ধু এই ব্যবসায় এক একজন এক লক্ষ টাকা করে মোট তিন লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করি। গাছ, গাছের চারা এবং গার্ডেনিং টুলস নিয়ে প্রথম ব্যবসা শুরু করি। আরো কিছু হ্যান্ড মেড প্রোডাক্ট অ্যাড করেছি যেগুলোর কাস্টমার রেসপন্স অনেক ভালো। এইসব প্রোডাক্ট ঢাকার বাইরে বাংলাদেশে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে ১৪ জন মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি।

প্রতিষ্ঠানের অফিস ঢাকার মিরপুরের কালশিতে অবস্থিত। অনলাইনে কাস্টমার কেয়ার সার্ভিসও মিরপুর অফিস থেকে দেওয়া হয়। একমাত্র শো-রুমটাও মিরপুর কালশীতে অবস্থিত। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে দুটি পেজ রয়েছে– ‘অন্তর-বন’ এবং ‘রুট শপ বিড ‘। হ্যান্ডমেড প্রোডাক্টগুলো বিদেশে রপ্তানির জন্য চেষ্টা হলেও কিছু প্রতিবন্ধকতার কারণে এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রোডাক্ট কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়। ঢাকা সিটিতে পৌঁছানো হয় নিজস্ব ডেলিভারিম্যান দ্বারা। মাসে বিক্রি ১০-১২ লাখ টাকা ।

তিন বন্ধুর উদ্যোক্তা হবার প্রধান কারণ হচ্ছে নিজের স্বাধীনতা এবং নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি দ্বারা প্রোডাক্ট উদ্ভাবন করা। অনেকগুলো আইটেম একসাথে করে একটি প্রোডাক্টে রূপান্তর করেন তারা। গাছ ছাড়াও যেমন: গ্লাস জার, কাঠের ফ্রেম, পাথর, মাটির টব, কোকো পোল, বাঁশের তৈরি হ্যান্ডমেড প্রোডাক্ট মুলত ইনডোর প্লান্ট, সেমি ইনডোর প্লান্ট এবং আউটডোর প্লান্ট, গার্ডেনিং টুলস, হ্যান্ডমেড এক্সেসরিস এবং হ্যান্ডিক্রাফট পণ্য। খুব স্বচ্ছতা ও ধৈর্যের সাথে খেয়াল রেখে কাজ করা হয়, যে কারণে প্রোডাক্টগুলো হয় ইউনিক।

বন্ধু যখন ব্যবসার ‘পার্টনার’হয়ে উঠেন, তখন কোন বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হয়? মোহাম্মদ রাজ হোসেন জয় বলেন, ‘ব্যবসা মানেই টাকাপয়সা, বিনিয়োগ, মতের মিল-অমিল। আসলে এখনও আমরা শিখছি। আমরা অনেকেই মনে করি, বন্ধুর সঙ্গে কখনো ব্যবসা করা যায় না। কিন্তু আমরা তিন বন্ধু মাথায় রাখি, বন্ধুকে নিয়ে একসঙ্গে অজানা পথ পাড়ি দেওয়া যায়। যে পথে চড়াই-উৎরাই, লাভ-লোকসান সব কিছুই আছে।’

এসব মাথায় রেখে কাজের সুবিধার জন্য তারা কাজ ভাগ করে নিয়েছেন। ডিজিটাল বিভাগ মোহাম্মদ রাজ হোসেন জয়, ফিনান্সিয়াল বিভাগ মোহাম্মদ শামীম পারভেজ এবং প্রোডাক্ট স্টক এন্ড প্যাকেজিং বিভাগ মোহাম্মদ মোস্তফা সরদার দেখাশোনা করেন৷ যার যার মতো তার সেক্টরের দ্বায়িত্ব পালন করেন। তাই কখনও তেমন অসুবিধায় পড়তে হয়নি।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তারা বলেন, এমন কিছু করা যাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের ভেতর গাছের জন্য ভালোবাসা বাড়ে এবং সবাই যেন একটি করে হলেও গাছ তার রুমে, অফিসে যেকোন স্থানে রাখতে পারেন। গাছকে আরো আকর্ষণীয় প্রোডাক্ট হিসেবে তুলে ধরে মানুষের ভেতর গাছের প্রতি ভালোবাসা বাড়িয়ে দেওয়াটাই তাদের লক্ষ্য। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে শো-রুম এবং দেশের বাইরে রপ্তানির স্বপ্নও তাদের।

নতুন উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে তিন বন্ধু বলেন: যেটাই করুন নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি এবং ধৈর্য ধারণ করে ব্যবসা করুন। একটা সময় সফল হবেন।

মেহনাজ খান,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here