হোমমেড খাবার নিয়ে তানজিনা খানমের এগিয়ে চলা

0
উদ্যোক্তা তানজিনা খানম

ছেলের জন্য ফ্রোজেন খাবার বানাতেন তানজিনা, হঠাৎ মনের মাঝে উঁকি দিলো এক ভিন্ন স্বপ্ন। তিনি ভাবলেন, চাইলেই এই খাবার বাইরেও দেয়া যায়। কিছু নাগেটস বানিয়ে বাসার একটা ফ্ল্যাটে দিলেন। তারা সেই খাবারটি কিনে নিলো এবং আবার অর্ডার করলো। মাত্র ২০০ টাকা পুঁজি দিয়ে তানজিনা খানম শুরু করলেন তার হোমমেড খাবারের উদ্যোগ ।

বাবার সরকারি চাকরির সুবাদে সাভারে থেকেছেন তানজিনা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, মাস্টার্স শেষ করেন। পড়াশোনা শেষ করে কিছুদিন শিক্ষকতা করেন এবং ৫ বছর জব করেন ওয়ারিদ টেলিকমে। সন্তানের দেখাশোনার জন্য অবশ্য চাকরি ছেড়ে দেন তিনি৷

উদ্যোক্তা জীবন শুরু করে প্রথমে ফ্রোজেন আইটেম নিয়ে কাজ করলেও পরে সব ধরনের খাবার নিয়েই তিনি কাজ করেন। দেশী খাবারের মধ্যে রয়েছে ভর্তা, খুদের ভাত, শাক, ভাজি, ডালমাখানি, মিক্সড সব্জি, ছোট মাছ, বড় মাছ, লতি চিংড়ি, চিংড়ি মালাইকারি, মুরগি ভুনা, বিফ ভুনা, বিফ কালাভুনা, বিফ রেজালা, রুই মাছের কোফতা। চাইনিজ খাবারের মধ্যে আছে ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, চিকেন চিলি, বিফ চিলি, চিকেন মাঞ্চুরিয়ান, ক্যশনাট সালাদ, চিকেন স্যুপ, চিকেন মাশরুম স্যুপ, চাইনিজ ভেজিটেবল, ক্রিমি চিজি পাস্তা। এছাড়াও রয়েছে মোরগ পোলাও, চিকেন বিরিয়ানি, বিফ বিরিয়ানি, বিফ তেহারি, চিকেন খিচুড়ি, বিফ খিচুড়ি, সব্জি খিচুড়ি, ভুনা খিচুড়ি, গার্লিক নান, তান্দুরি চিকেন, রায়তা, বাটার চিকেন। আর ফ্রোজেন খাবারের মধ্যে আছে চিকেন হাফ মুন পাই, চিকেন সমুচা, চিকেন নাগেটস, চিকেন মমো, অন্থন, চিকেন রোল, বিফ কলিজা সিংগারা। এছাড়াও আছে ডেসার্ট আইটেম যেমনঃ পুডিং, শাহি টুকরা, গুঁড়ের পায়েস, জর্দা, ঘিয়ে ভাজা সেমাই। পিঠাপুলি নিয়েও কাজ করেন তিনি। পিঠার মধ্যে রয়েছে পাটিসাপটা, সিদ্ধ পুলি, নারকেল ভাজা পুলি, দুধ পুলি, হাতের সেমাই পিঠা, রসের মুগ পাকন, তালের পিঠা, ইত্যাদি।

সবকিছু তিনি নিজের হাতে পরিস্কার করেন। তিনি বলেন, “আমি খেয়ে যে শান্তি পাই, কাস্টমারকেও যেন সেটা দিতে পারি। সেই চেষ্টাই করি।”

একটা বইয়ের ভেতরে যেমন অনেককিছু জানার থাকে, তেমনি তার রেসিপি আর কিচেনেও রয়েছে অজানা অনেক কিছু। এই কারণেই তিনি তার উদ্যোগের নাম দিয়েছেন Rupa’s Cook Book। দুইজন সহযোগীর সহায়তায় তিনি তার উদ্যোগ খুব ভালোভাবেই পরিচালনা করে যাচ্ছেন৷ মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা সেল হয় তার ।

উদ্যোক্তা বার্তাকে তিনি বলেন, “কয়েক বছর কাজ করে অনেক কিছু শিখছি। এখন নিজের প্রতি বিশ্বাসটা অনেক শক্ত হয়েছে। আগে চাকরি করলেও এটা আমার নিজের কাজ, তাই অনেক ভালো লাগে। রান্না করতে করতে হাত অনেক ভালো হয়েছে। এখন দিনে ২/৪/৫টা যাই ডেলিভারি দেই, ৯৯ ভাগ কাস্টমার খাবার এতো পছন্দ করে যে নিজেই অবাক হয়ে যাই। আমার কিচেন আমি অনেক পরিস্কার রাখি। যারা পরিচিত তারা এটা খুব ভালো করে জানেন তাই চোখ বন্ধ করে অর্ডার করেন। করোনার এই বিপদ কালে অনেক বাসায় খাবার দিয়েছি। অনেক সময় অনেক অল্প সময়ে ডেলিভারি দিয়েছি। কাস্টমারের অনেক দোয়া পেয়েছি। আমি খাবার ফ্রিজ আপ করি না, খুবই কম। অর্ডার পেলেই বাজার করি। কিছু জিনিস কিনে রাখি যা ৩/৪ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। এখন আমাকে অনেকে একজন উদ্যোক্তা হিসাবে চেনেন যেটা নিজের আরেকটা পরিচয় যা আমার বিশ্বাস এবং নিজের অস্তিত্বকে শক্ত করেছে।”

নতুনদের উদ্দেশে তিনি বলেন: তরুণ উদ্যক্তাদের জন্য বলবো তাদের যা ভালো লাগে তা নিয়ে যেন কাজ করে। সততা আর পরিশ্রমের সাথে কাজ করতে হবে। তাহলে জীবনে সফলতা পাওয়া সম্ভব।

সেতু ইসরাত,
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here