আমাজনের সিইও এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্য একজন জেফ বেজোস

সে জন্ম নিয়েছিলো এমন একটা পরিবারে যেখানে দশ বছর পূর্ণ হবার আগেই জানতে পারে যে তার একজন সৎ বাবা আছে এবং তার আসল বাবা তাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু এই বিষয়গুলো তাকে কোটিপতি হওয়া থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারেনি। এটা ছিল একটা সূচনা, শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছানোর।

জ্বী, কথা বলছিলাম বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় অনলাইন বিজনেস প্রতিষ্ঠান আমাজনের সিইও এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের মধ্য একজন জেফ বেজোসের কথা।

বেজোসের জন্ম নিউ মেক্সিকোর শহর অ্যালবুকার্কিতে। ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন তিনি। গ্রীষ্মকালীন সময়ে যে অবকাশটা পেতেন সেই সময়টা নানার বাড়িতেই কাটাতেন। সেখানে নানান কাজের পাশাপাশি তিনি নানার ফার্মের বিভিন্ন কাজে দক্ষ হয়ে উঠতে থাকেন।

ছোটবেলা থেকেই মেকানিক্সের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ ছিলো। ফলে ছোটবেলায় একটি ইলেকট্রিক অ্যালার্মও তৈরী করে ফেলেছিলেন। মেকানিক্সের প্রতি ভালোবাসার জন্য তিনি নিজের ঘরকে একটি ছোটখাট ল্যাবে পরিণত করে ফেলেছিলেন।

আস্তে আস্তে সময় যেতে থাকে, ছোটবেলা থেকেই বেজোসের পড়াশোনার প্রতি তীব্র আগ্রহ জন্ম নিয়েছিলো আর সেই পড়াশোনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান নিয়েছিলো কম্পিউটার নিয়ে জানা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি আইবিএম প্রোগ্রামে কাজ করতেন। পরবতীতে স্নাতক শেষ করার পর, তিনি ওয়াল স্ট্রিটে চাকরী নেন। তখন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচুর চাহিদা ছিলো। ফলে তিনি অনেকগুলো আইটি ফার্মে চাকরী করার সুযোগও পেয়েছিলেন।

১৯৯৪ সালে একদিন বেজস ইন্টারনেটের একটি বিষয় নিয়ে পরিসংখ্যানের মধ্য দিয়ে এক অভাবনীয় তথ্য পেয়ে যান। তিনি দেখেন যে, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের (www) প্রতিমাসে ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৩০০ শতাংশ করে বেড়েই চলেছে। ঠিক তখনই বেজোস অনলাইনে প্রোডাক্ট বিক্রির সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎটিকে খুঁজে পান। এই ভাবনা থেকেই তিনি মূলত চাকরী ছেড়ে দিয়ে নিউইয়র্ক থেকে সিয়েটলে চলে আসেন।

অনলাইন বিজনেস পরিচালনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে তিনি আমাজনকে পুরোপুরি প্রস্তুতের কাজে লেগে যান।আমাজনের শুরু হয় তার সিয়েটলের বাড়ির গ্যারেজ থেকে। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়, স্বজনদের কাছ থেকে তিনি প্রায় ১ মিলিয়ন ডলার ধার নিয়ে আমাজনের যাত্রা শুরু করেন।

প্রথমত তিনি অনলাইন বিজনেস পরিকল্পনার ক্ষেত্রে অনলাইনে বিক্রির উপযোগী প্রায় ২০ ধরণের প্রোডাক্টের লিস্ট করেন। মূলত আমাজনকে একটি অনলাইন বুক স্টোর হিসেবে তৈরী করতে চেয়েছিলেন। কারণটা ছিলো আমেরিকান সরকার তখন ক্যাটালগ অভ্যন্তরীণ মেইল-অর্ডারের মাধ্যমে পাঠানোর ক্ষেত্রে ট্যাক্স মওকুফের ঘোষণা দেয়। ফলে বেজোস কোন প্রোডাক্ট বিক্রেতার কাছে পাঠালে তাকে কোন ট্যাক্স দিতে হবে না।

১৯৯৪ সালের ৫ই জুলাই অ্যামাজন প্রথমে “ক্যাডাব্রা” নামে যাত্রা শুরু করে। পরবতীতে নাম পরিবর্তন করে দেন আমাজন।

জেফ বেজোস প্রথমে তাদের পণ্য ফেস টু ফেস বিক্রি করতো। কিন্তু বেশি দিন এই ব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে চালানো সম্ভব হয় নি। কেননা একমাসে মধ্যেই প্রায় ৫০টি রাজ্যে এবং ৪৫টি দেশে অ্যামাজন ছড়িয়ে পড়ে। সে বছরের সেপ্টেম্বর তাদের সাপ্তাহিক বিক্রির পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ২০ হাজার ডলারে। কিন্তু তখনো অ্যামাজন অনলাইন স্টোর হিসেবে পরিপূর্ণ ছিলো না।

এছাড়াও তিনি নতুন জনবল নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন এবং তার নতুন এই টিমকে জে-টিম নামে অভিহিত করা হয়। এই টিমের অসাধারণ কর্মদক্ষতায় জন্যই অ্যামাজন সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

১৯৯৮ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৯ বছরে আমাজনের অধিগ্রহণ করা কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৪৪টি। পরবর্তীতে বেজোস গুগলে ২৫০,০০০ ডলার বিনিয়োগ করেন যার বর্তমান মূল্য ৩.১ মিলিয়ন ডলার।

১৯৯৯ সালে অ্যামাজন ১৫০ বিলিয়ন মূল্যের ওষুধ বাজারে প্রবেশ করে। এর ঠিক একমাস পরে, খেলনা ও ইলেক্ট্রনিক্স পন্যকে অ্যামাজনে আনা হয়। একই বছর ক্লেইনের পারকিন্স কওফিল্ড অ্যান্ড বায়ার্স আমাজনে ৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে এবং ৫৫০০০ শতাংশ বেড়ে ফেরত আসে।
একই সময়ে জেফ বেজোস অ্যামাজনে ওয়ান ক্লিক অর্ডার প্রসেসটি যুক্ত করেন। ফলে ক্রেতারা তাদের ক্রেডিট কার্ড দিয়ে সহজে কেনাকাটা করতে পারে।

২০০২ সালে ল্যান্ডস এন্ড, নর্ডট্রম এবং দ্যা গাপের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে অ্যামাজন পোষাকের বাজারে প্রবেশ করে। এ বছর থেকে অ্যামাজনের প্রোডাক্ট সংখ্যা বাড়তে থাকে।

এরপর ২০১১ সালে অ্যামাজন “কিন্ডেল ফায়ার” বাজারজাত করে সরাসরি অ্যাপেলের সাথে প্রতিযোগিতায় নামে। এরপর থেকে আমাজনের আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।

মোঃ হৃদয় সম্রাট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here