উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম

প্রাচীনকালে গ্রাম কিংবা শহরের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে থাকতো মাটির প্লেট, গ্লাস, সানকি, কলস, পানির জগ, মগ, চায়ের কাপ, নাস্তার বাটি, বোল, হাড়িঁ ইত্যাদি। কিন্তু ঐতিহ্যবাহী এসব পাত্রের ব্যবহার বর্তমানে নেই বললেই চলে। মূলত মাটির পাত্রের উপকারী দিকগুলো অনেকেই জানেন না বলে এর ব্যবহার থেকে দূরে যাচ্ছে মানুষ। মাটির পাত্রে রান্না, খাবার সংরক্ষণ এবং খাওয়ার জন্য মাটির ব্যবহার করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমে। মাটির পাত্রে খাবারের পুষ্টিগুণ অটুট থাকে বলে জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেজ “তাহমিনা’স কালেকশন”র স্বত্ত্বাধিকারী তাহমিনা ইসলাম।

উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম গল্পের শুরু করেন পরিবারের পরিচিতি দিয়ে। তিনি ছিলেন বাবা-মায়ের ছোট মেয়ে। শিশুবেলা থেকে ইচ্ছে ছিলো প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার। কিন্তু তার বিয়ে হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। ২০১৫ সালে বিয়ে হওয়ার দুই বছরের মাথায় একটি পুত্র সন্তানের মা হন তাহমিনা। কিন্তু বিয়ের আগে যে স্বপ্ন ছিলো তা পূরণ হয়নি বলে মনে একটি আক্ষেপ রয়ে যায়।

উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম জানান, এইচএসসি শেষ করেন কাইতলা আলীমউদ্দিন জোবেদা ডিগ্রি কলেজ থেকে। তার পরও প্রশাসনে যুক্ত হওয়ার স্বপ্নতো পূরণ হয়ইনি, পরিস্থিতির কারণে স্নাতকও শেষ করতে পারেননি।

তাহমিনার উদ্যোক্তা-জীবন শুরু হওয়া নিয়ে বলেন, ২০১৯ সালে নিজে কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। ব্যবসা প্রথম শুরু করেন দেশী থ্রী-পিস নিয়ে। কিন্তু তা নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট ছিলেন না। ছোটবেলা থেকেই তো মাটির পাত্রে খাওয়ার একটা সখ তার ছিলো। তিনি ভেবে দেখলেন শখের পণ্য নিয়ে কাজ করা যাক।

এর পর তিনি ২০২০ সালের ১০ জুলাই থেকে শখের মাটির তৈজসপত্র নিয়ে ব্যবসা নতুনভাবে শুরু করেন। ৯ হাজার টাকার পুঁজি দিয়ে মাটির তৈজসপত্র তৈরি করেন। মাটির ডিনার সেটসহ বিভিন্ন আইটেমের দিকে দৃষ্টি দেন। যাতে করে দেশীয় পণ্যের শৌখিন ক্রেতারা সৃজনশীলতা খুঁজে পায় এবং উদ্যোক্তার পণ্য সহজেই বিক্রি হয়। এভাবেই উদ্যোক্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পেজে পণ্যের ছবি প্রদর্শন করে বিক্রি করতে থাকেন। এখন তার মাসিক বিক্রি করেন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার মতে।

দেশের কোন কোন স্থানে পণ্য বিক্রি করেন তা জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, যেহেতু মাটির তৈরি পণ্য তাই দেশের ঐতিহ্য হিসেবে অনেকেই শখ করে মাটির তৈরি প্লেট ও গ্লাসে খাবার খেতে পছন্দ করেন ।তাই বাংলাদেশের অনেক জায়গা থেকেই অর্ডার আসে। আর তিনি সবসময়ই চেষ্টা করেন নির্ধারিত সময়ে পণ্য পৌঁছে দিতে।

উদ্যোক্তা তাহমিনা ইসলাম ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বলেন, ‘নিজের একটি শোরুম হবে ইনশাআল্লাহ। আমি চাই আমার দ্বারা অসহায় ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থান হোক’।

নতুনদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ইচ্ছে থাকলে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়। আমাদের প্রতিটা নারীর উচিৎ নিজের পায়ে দাঁড়ানোর এবং নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করা। আমরা মেয়েরা চাইলে সব করতে পারি, সব বাধা অতিক্রম করতে পারি, শুধু আমাদের ইচ্ছে শক্তিটা প্রয়োজন। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যেনো নিজের স্বপ্নগুলোকে একটু একটু করে বাস্তবায়ন করতে পারি’।

মেহনাজ খান
উদ্যোক্তা বার্তা, ঢাকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here