লন্ডনে ইউনিভার্সিটির দেয়ালে উদ‍্যোক্তা কান্তার তৈরি ঘড়ি

0
উদ‍্যোক্তা নাসরিন সুলতানা কান্তা

খুলনাতে জন্ম হলেও চার বছর বয়স থেকে ঢাকায় বড় হয়েছেন। বিকম পাশ করেছেন ঢাকার এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে। ছোটবেলা থেকেই ক্রাফটের প্রতি তার নেশা ছিল, অবসরে টুকটাক কাজ করতেন ক্রাফট নিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় শখ থেকেই ক্রাফট নিয়ে উদ‍্যোক্তা হন নাসরিন সুলতানা কান্তা।

তিনি বললেন, ক্রাফট করাটা প্রথমে শুধুমাত্র শখের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ২০১৮ সালে হঠাৎই বড় ছেলে বলল, ‘আম্মু সবাই মোবাইলে কত কি সেল করে, চলো আমরাও সেল করি, সেই টাকা দিয়ে অনেক মজার কিছু কিনে খাবো।’ ছেলের সাথে দুষ্টুমি করার ছলেই K Craft by Kanta নামে একটা পেইজ খোলেন তিনি। বিশেষ কোন পরিকল্পনা ছিল না। আস্তে আস্তে ছোট পরিসরে চলছিল তার কাজ। কিন্ত তিনি অফলাইনে অ্যাক্টিভ থাকতেন তার উলের বুনন চুড়ি আর কিছু কুশন কাভারের কাজ নিয়ে।

স্মৃতিচারণ করে উদ‍্যোক্তা নাসরিন সুলতানা কান্তা জানান: ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে আমার হাসবেন্ডের বিজনেসের চরম খারাপ অবস্থা হয়। আমার চাকরিটাও নড়বড়ে অবস্থায় পড়ে। দুটো বাচ্চা, বাসা ভাড়া, সংসার খরচ সবকিছু নিয়ে কেমন এক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলাম, যাকে বলে মানসিক ডিপ্রেশনে ডুবে যাচ্ছিলাম। তখনই আমার এক কলিগ বললেন, ‘মিস, আপনিতো অনেক ধরনের হাতের কাজ পারেন, তার উপর আপনার একটা পেইজ আছে। তাহলে আপনি উই গ্রুপে জয়েন করেন। ইনশাআল্লাহ ভালো কিছু হবে।’ তার কথায় ২৪ এপ্রিল, ২০২০ সালে উই-তে জয়েন করি। জুন মাসের পর আমাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আমি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে কখনোই কার্পণ্য করি না, তাই বলবো উই আমার উদ্যোক্তা জীবনে অনেক বড় অবদান রেখেছে।

করোনার ওই সময়টায় তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে ওইসময় আড়াই হাজার টাকাও তাদের কাছে ছিল না। তখন এমন কোন আপন মানুষ ছিল না যে তাদের কাছে ধার চাননি। কিন্তু তখন কারো কারো অবস্থা ছিল তার মতোই। যাদের সামর্থ্য ছিল তারা এই বলে তিরস্কার করেছিল যে এই দুর্দিনে তিনি বিলাসিতা বা পাগলামি করছেন। সেসময় কান্তার এক কথায় তার ছোট ভাবী আড়াই হাজার টাকা ধার দিয়ে সাপোর্ট করেছিলেন। “এই স্মৃতিগুলো কখনই ভোলার নয়।”

আড়াই হাজার টাকা দিয়ে উদ‍্যোগ শুরু করেছিলেন উদ‍্যোক্তা। সব কাজ তিনি ঘরে বসে একা একাই করেন। এখন কোন কোন মাসে ৪০/৪৫ হাজার টাকা সেল হয়, কোন মাসে ২৫ হাজার, তবে ২০ এর নিচে কখনোই সেল নামেনি।

“বতর্মানে আমার পণ্য বিদেশেও ভালো যাচ্ছে। সবটাই আমি লোক মারফত পাঠিয়ে থাকি। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, কানাডা, জার্মানি, কাতার, ফ্রান্স, সিঙ্গাপুর, পাকিস্তান, ডেনমার্কসহ নানা দেশেই যাচ্ছে তার পণ্য। ”বর্তমানে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটির দেয়ালে আমার তৈরি করা ঘড়ি শোভা পাচ্ছে। এটা আমার জন‍্য অনেক আনন্দের।”

সামাজিক বাধা প্রসঙ্গে নিজের উদাহরণ টেনে কান্তা বলেন: শুরুতে কেউ কেউ বলতো, ওর স্বামীর মনে হয় ইনকাম নেই, তাই এসব করছে। কেউ আবার বলতো কীসব পাগলামি করছে, শেষ পর্যন্ত হারিকেন, কেটলি এসব বিক্রি করছে! উপহাসমূলক বহু মন্তব্য শুনলেও পারিবারিক সাপোর্ট সবসময়ই পেয়েছি। আমার আব্বু সবসময়ই চাইতেন আমি আমার এই ক্রাফট নিয়ে কিছু করি। আব্বু চলে গেলেন ২০১৬ সালে। আমি কাজ শুরু করলাম ২০১৮ তে। আব্বু কিছুই দেখে যেতে পারলেন না। এই একটা আফসোস আমার মনে আজীবনেই থেকে যাবে।

তরুণ উদ‍্যোক্তাদের জন‍্য তিনি বলেন, বর্তমানে অনলাইন বাজারে এতো বেশি প্রতিযোগিতা যে কে কাকে টপকে যাবে এরকম একটা অবস্থা। এর মধ্যে কেউ কেউ শখের উদ্যোক্তাও আছেন যাদের জন্য আসল উদ্যোক্তারা কিছুটা বাধাপ্রাপ্ত হন। তবে দিন শেষে সত্যিকারের উদ্যোক্তারাই টিকে থাকেন।

“আমার সবসময়ই পরামর্শ থাকবে, আপনি যে কাজটা করছেন তা মন থেকে করুন, ভালোবেসে করুন, সততার সাথে করুন। ইনশাল্লাহ, জয় সুনিশ্চিত।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে উদ‍্যোক্তা কান্তা: আমার পরিকল্পনা বড়, কিন্তু বিভিন্ন পরিস্থিতিতে এগোতে পারছি না। তবে কখনোই হতাশ হই না। আমি স্বপ্ন “K Craft by Kanta” একদিন ব্রান্ডে পরিণত হবে ।

আফসানা অভি
উদ‍্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here