কেকা ফেরদৌসী। জন্ম ৪ঠা আগস্ট, ১৯৬০ সালে, ঢাকায়। বাবা ফজলুল হক ছিলেন চলচ্চিত্র সাংবাদিক ও পরিচালক। মা কথা সাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন। বাবা মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে কেকা ফেরদৌসী দ্বিতীয়।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল বিভাগে পড়াকালীন সময়েই ব্যবসায়ী ও প্রকৃতিপ্রেমী মুকিত মজুমদার বাবুর সংগে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের পর কয়েক বছর অতিবাহিত করেছেন যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রে। ছোটবেলা থেকেই রান্না করতে পছন্দ করা কেকা ফেরদৌসী প্রবাসে থাকার সময় প্রাচ্য আর পাশ্চাত্যের অনেক রান্না শেখার সুযোগ হয়। দেশে ফিরে ঐতিহ্যবাহী রান্নাসহ অন্যান্য দেশের রান্নাকে কি করে সাধারন মানুষের কাছে সহজভাবে তুলে ধরা যায় তা নিয়ে উদ্যোগী হলেন। প্রতিষ্ঠা করলেন “কেকা ফেরদৌসীর রান্নাঘর”নামে একটি স্কুল।

দেশের ঐতিহ্যবাহী রান্নাকে জনপ্রিয় করতে কেকা ফেরদৌসী মাধ্যম হিসেবে বেছে নিলেন মিডিয়াকে। ১৯৮৭ সালে তারপ্রথম রান্নার অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়।

১৯৯৪ সালে টেলিভিশনে তার রান্না শুরু হয় বিটিভির মাধ্যমে পরিবর্তিতে স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলে। বাংলাদেশে ইফতার নিয়ে প্রথম টেলিভিশন অনুষ্ঠান কেকা ফেরদৌসী নির্মিত মনোহর ইফতার অনুষ্ঠানটি, শুরু থেকেই যা বাংলাদেশের শীর্ষ জনপ্রিয় রান্নার অনুষ্ঠান। টেলিভিশনে তিনিই প্রথম ঋতুভিত্তিক রান্নার অনুষ্ঠান করেন।

টিভি পর্দায় রান্নার এমন উপস্থাপন দেখে দর্শক একদিকে যেমন রান্নার বিষয়ের প্রতি আকর্ষিত হয়েছেন, তেমনি হয়েছেন বিস্মিত ও মোহিত। দেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী রান্না টিভি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে কেকা ফেরদৌসী শুরু করেন “দেশবিদেশে রান্না”অনুষ্ঠানটি।

ঐতিহ্যবাহী রান্নার খোঁজে গেছেন দেশের বিস্তির্ণ অঞ্চলে। সেখান থেকেও দর্শকদের জন্য তুলে এনেছেন বৈচিত্র্যময় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করবার কৌশল। বিশেষ দিনগুলোতে কেকা ফেরদৌসীর থাকে ভিন্ন আয়োজন। বিজয় দিবস, কিংবা স্বাধীনতা দিবস থেকে শুরু করে রবীন্দ্র- নজরুল জয়ন্তী, সব আয়োজনেই তিনি প্রাসঙ্গিক রান্নাকে পরিচয় করিয়ে দেন দর্শকদের সংগে।

২০১১ সালে তিনি শুরু করেন “মায়ের হাতের রান্না” অনুষ্ঠানটি। বিশিষ্টজনদের মায়ের স্মৃতিময় পছন্দসই রান্নার এই অনুষ্ঠান, কেকা ফেরদৌসীকে নিয়ে গেছে ভিন্ন উচ্চতায়।

যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে” অনুষ্ঠানটিও তার নির্মিত আরো একটি জনপ্রিয় অনুষ্ঠান।

ইলেকট্রনিক মিডিয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় রান্না নিয়ে তার প্রকাশিত লেখা আমাদের রন্ধনশিল্পকে সমৃদ্ধ করেছে। রান্না নিয়ে তার লেখা প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা এগার। সবশেষ বই“ডায়াবেটিসের মজাদার রান্না”।

২০১৪ সালে কেকা ফেরদৌসী গঠন করেন কুকিং এসোসিয়েশন। তার প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দু:স্থ মহিলাদের রান্নার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করেন।

কেকা ফেরদৌসী এযাবৎ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। এর মধ্যে ফ্রান্স এর বেস্ট টিভি সেলিব্রেটি শেফ রেস্ট অফ দা ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল গোরমর্ন্ড ওয়ার্ল্ড কুক বুক এ্যাওয়ার্ড-২০১০, ব্রিটিশ কারী এ্যাওয়ার্ড-২০১১ উল্লেখযোগ্য। কেকা ফেরদৌসী সম্মানিত হয়েছেন আন্তর্জাতিক রান্না প্রতিযোগিতার বিচারকের সম্মানে।

রন্ধন শিল্পের এই বিগ সেলিব্রিটি উদ্যোক্তা কদিন আগে তার রান্নার ভুবনে পদার্পনের ২৫ বছর উদযাপন করলেন। কেকা ফেরদৌসী নানা কর্মকান্ডে আমাদের ঐতিহ্যবাহী এবং সাধারন রান্নাকে দিয়েছেন শিল্পের মর্যাদা।

 

স্পেশাল উদ্যোক্তা ডেস্ক
উদ্যোক্তা বার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here