কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মৃৎশিল্প। তৈরি হতো মাটির হাঁড়ি-পাতিল, থালা, গ্লাসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় তৈজসপত্র। মৃৎশিল্পের বাজার এখন দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়ামের পণ্য। তবে এখনো মাটির আধুনিক মানের তৈজসপত্র তৈরি হচ্ছে কুমিল্লার বিজয়পুরে।
কুমিল্লা সদরের দক্ষিণ উপজেলা বিজয়পুরের মৃৎশিল্পের পণ্য সামগ্রী বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যের প্রতীক। উৎসবকে সামনে রেখে চাহিদা বাড়ে মাটি দিয়ে তৈরি পণ্য সামগ্রীর, তখন পণ্য তৈরির কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মৃৎশিল্পীরা।
বিজয়পুর রুদ্রপাল মৃৎশিল্প সমবায় সমিতির উদ্যোগে পরিচালিত দেশের এই বৃহৎ মৃৎশিল্প কারখানায় মাটির রূপ দেয় দৃষ্টিনন্দন শিল্পকর্মে। তবে এখান যুক্ত হয়েছে যান্ত্রিকতার ছোঁয়া। যা শিল্পীদের নান্দনিক হাতের ছোঁয়ায় তৈরি এসব মাটির পণ্য উৎসবকে ঘিরে দেশের নানা প্রান্তে যাচ্ছে। রপ্তানি হচ্ছে দেশের বাইরেও।
বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র বলতে উন্নতমানের চাকতি ব্যবহার করা হয় যা কিনা পা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কখনো আবার হাতের ছোঁয়া বা আঙুলের স্পর্শে মাটিকে রূপ দেওয়া হয় ফুলদানি, পেয়ালা দইয়ের হাঁড়ি, গাছের টব অথবা অন্যকোন তৈজসপত্র।
ছোট টিনের পাত কিংবা জি আই তার দিয়ে দাগ টেনে নকশা দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন পাত্রের গায়ে পাতলা ছুরি দিয়ে চূড়ান্তভাবে দেওয়া হচ্ছে মসৃণতা। বিশেষ ডাইস মাটির সেটে বানানো হয় মাটির তৈরি বিভিন্ন নকশা।
ডাইসের নকশা তৈরি করার পর সেগুলোতে চলে বিভিন্ন কাটাছেঁড়া। অতিরিক্ত অংশ ফেলে দেওয়ার পর পরিপূর্ণ নকশাগুলো এ পর্যায়ে হাতবদল হয়ে এগুলো চলে আসে অন্য কোনো টেবিলে। যেখানে বড় পাত্রে ফুলদানি জিনিসপত্র বা ঘর সাজানো পাত্রের গায়ে লাগানো হয় নকশা গুলোকে। অর্থাৎ এখানকার প্রতিটি শিল্পকর্মের রয়েছে কমবেশি সকলের অংশগ্রহণ।
নানান সংকট থাকা সত্বেও পৈতৃক পেশাকে ধরে রেখেছেন এখানকার মৃৎশিল্পীরা৷ আধুনিকতার সাথে তাল মিলিয়ে এখানে তৈরি করা হচ্ছে নিত্য নতুন পণ্য। যার মধ্যে ফুলের টব, ফুলদানি, শিশুদের খেলনা, হাড়ি পাতিল, শোপিস, গ্লাস, মগ, চায়ের কাপ সেটসহ ডিনার সেট, গৃহস্থালি পণ্যসহ নানান পণ্য। বিশেষ করে দেশের বৈশাখি মেলা ও লোকজ মেলায় কদর থাকে মাটির তৈরি এসব পণ্যের।
গ্যাস সরবরাহের বিঘ্ন ঘটায় এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান মৃৎশিল্পীরা। এজন্য গ্যাস সরবরাহ নির্বিঘ্ন করার দাবি তাদের।
মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবং এটিকে সমৃদ্ধ করতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি এই মৃৎশিল্পকে জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কাজ চলছে বলে জানান কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পঙ্কজ বড়ুয়া। তিনি বলেন: আপনারা সবাই জানেন যে আমাদের কুমিল্লার মৃৎশিল্প লোকজ ঐতিহ্যের একটি অংশ। বিভিন্ন উৎসবগুলোতে মৃৎশিল্পের চাহিদা রয়েছে। সেই সাথে আমরা এই মৃৎশিল্পকে জিআই পণ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
ঐতিহ্যবাহী এই মৃৎশিল্প বাঙালির গ্রামবাংলার প্রাচীন সংস্কৃতির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। তাই এই শিল্পকে আরো প্রসিদ্ধ করার অনুরোধ সংশ্লিষ্টদের।
সেতু ইসরাত
উদ্যোক্তা বার্তা