শ্রীমতী চায়না রানী দাস পূর্বে অন্যের প্রতিষ্ঠানে পোশাকে হাতের কাজ করতেন আজ তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাঠপর্যায়ে রয়েছে পাঁচশতও অধিক সহযোদ্ধা এবং একটি শোরুম। শুধু কি তাই? আশ্রয় এবং যুব উন্নয়ন থেকে হাতের কাজ এবং ব্লক বাটিক এর প্রশিক্ষণ নেওয়া এই নারী আজ নিজেই সেই প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে থাকেন। ইতোমধ্যে পাঁচহাজার নারীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন তিনি। যাদের মধ্যে অনেকেই এখন সফলতার সাথে কাজ করছেন।
চায়না রানী দাস স্বামীর সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ২০ থেকে ২২ বছর পূর্বে হয়েছিলেন উদ্যোক্তা। কিন্তু ঐ সময় উদ্যোক্তা শব্দটি আমাদের সকলের কাছে অপরিচিত একটি শব্দই ছিলো বৈকি। তখন তারা পরিচিত ছিলেন ব্যবসায়ী নামে। ঐসময়ের একজন নারী ব্যবসা করবেন, দিনের পর দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেলায় অংশ নেবেন এটি তখনকার সমাজে আকাশ কুসুম কল্পনা ছিলো। কিন্তু এই কাজে সফল হয়েছেন রাজশাহীর তানোরের গৃহবধূ চায়না রানী। স্বামী এবং দুই ছেলের সহযোগিতায় আশেপাশের লোকের বিব্রতকর কথার গুরুত্ব না দিয়ে কাজ করে গেছেন এই নারী। তারপর থেকেই আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি।

পাঁচ হাজার মূলধনে কয়েকটি পাঞ্জাবীর অর্ডার নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান রঙের ছোঁয়া বুটিক হাউসের যাত্রা শুরু হয়েছিলো। আজ সেখানে হাতের কাজের ছোট বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, শাড়ি, নকশিকাঁথা, বিছানার চাদর, বালিশের কাভার, কুশন কাভার, বেবি ড্রেস, পাঞ্জাবী, ওয়ান পিস, টুপিস, থ্রিপিস ইত্যাদি পণ্য তৈরি হচ্ছে। নিজ এলাকা তানোরে সহ রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে রঙের ছোঁয়া বুটিক হাউসের পণ্য নিয়মিত যায়। এছাড়াও ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা সহ দেশের অসংখ্য জেলায় চায়না রানীর প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ধরনের পণ্য গেছে এবং যাচ্ছে। উদ্যোক্তা বার্তার সাথে কথপোকথন কালে তিনি বলেন, “রাজশাহী শহরে ওয়ান পিসের চাহিদা বেশি, ঢাকা এবং চট্টগ্রামের দিকে টুপিসের চাহিদা এবং দেশের বাইরে আমার নকশিকাঁথাগুলো বেশি যায়।”

চীন মৈত্রী মেলা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মেলা, যুব উন্নয়নের মেলা সহ অসংখ্য মেলায় অংশ নিয়েছেন এবং কাজের জন্য বহুবার পুরষ্কার ও জিতেছেন এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, ‘সকলের আশীর্বাদে আজ আমি নিজের উপার্জনে জমি কিনে সেখানে বাড়ি তৈরী করেছি এবং আমার শোরুমও চালু করেছি। আমার মতো সকল নারীর নিজস্ব পরিচয় থাকবে এটিই আমার চাওয়া।” যেসকল মা-বোন অবহেলিত, নিজস্ব পরিচয় নেই; তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান জানান এই উদ্যোক্তা।
তামান্না ইমাম,
উদ্যোক্তা বার্তা